জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি মানুয়ের মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করেছিলেন। স্বাধীনতার উষালগ্নে ধ্বংসস্তুপের মাঝে পথ চলা আমাদের বাংলাদেশের। চারদিকে শুধু ছাই, আর ছাই। রাস্তা ঘাট, রেলপথ, বিশাল এলাকার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর সর্বশান্ত ছিলেন সে সময়ের জনগণ। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদার নিদারুণ সংকট। বাংলাদেশ ব্যাংক ছিলো শূন্য। আজকের মতো বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের কল্পনা তখনকার দিনে শুধু স্বপ্ন ছিলো। বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেতা খুব স্বল্প সময়ে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখনকার বাংলাদেশ ছিলো উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিলো সুদূরপ্রসারী।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে এসেছে। ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর প্রত্যয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা বিষয়ে র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে দৈনিকশিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টির প্রয়াসে ঢাকা শহরের ৬৯টি কলেজকে নিয়ে ঐতিহাসিক দুঃসাহসী র্যাঙ্কিংয়ের শুভ সূচনা করেছে। এ যাত্রা আকারে বড় না হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার বিশাল প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে।
জরিপ কাজে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এক দল উদ্যমী ও মেধাবী শিক্ষার্থী। জরিপে কলেজগুলোতে ভর্তি ও পাসের হার, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, পাঠ্যক্রম বর্হিভূত কার্যক্রম, খেলার মাঠ, পাঠাগার, ক্লাব কার্যক্রম ইত্যাদি ২১টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মূল্যায়ন নেয়া হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানান হয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিং করবে দৈনিকশিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা। এ দুঃসাহসী উদ্যোগকে সফল করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সহযোগিতার আহ্বান জানাই। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কার্যক্রমকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষা এগিয়ে যাবে। এ জরিপের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, উন্নত দেশের শিক্ষা মানদণ্ডের পর্যায়ে। ডি ক্যাটাগরিতে ৫০ শতাংশের নিচে নম্বর পেয়ে কোনো কলেজ পাওয়া যায়নি। জরিপে প্রতীয়মান হয়েছে জরিপকৃত কলেজগুলো একেবারে নিম্নমানের নয়। বিশ্বপ্যাপী র্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নির্ণয় হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে শিক্ষার মান-উন্নয়নে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।দৈনিকশিক্ষাডটকমের র্যাঙ্কিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য অধ্যাপক ড. এ এসএম মাকসুদ কামাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, শিক্ষাবিষয়ক সাংবাধিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইরাব সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্যসহ অন্যান্যারা।
সম্প্রতি রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত দৈনিকশিক্ষাডটকম কলেজ র্যাঙ্কিং ২০২৩ ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বরেণ্য শিক্ষাবিদ মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কলেজ র্যাঙ্কিংয়ের মতো ভালো উদ্যোগ কন্টিনিউ করতে হবে। শুধু স্যাম্পল নিয়ে নয়, সারা দেশের শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিংয়ের কাজে স্কুল ও কলেজকে ফিন্যান্স করতে হবে।’
উপ-উপচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পরিপূর্ণ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকমের নেয়া উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং প্রকাশ করতে উৎসাহিত করবে।’ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান বলেন, আসলে বাংলাদেশের এ ধরনের কাজ এই প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান সম্পর্কে র্যাঙ্কিং করার এ উদ্যোগকে সাহস বললে ভুল হবে, এটা দুঃসাহস। এজন্য দৈনিকশিক্ষা ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে সাধুবাদ জানাই। এ উদ্যোগ ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমাদের এখানে যে কাজটি সরকারিভাবে করা উচিত ছিলো তা দৈনিকশিক্ষাডটকম করলো, যা অসাধারণ। দৈনিক শিক্ষা মাঠে বল নামিয়ে দিলো, এ খেলা এখন চলবে, চলতে হবে। দৈনিকশিক্ষাডটকম ইতোমধ্যে এক যুগ পার করেছে। এক যুগে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন তারা রেখেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারণ, এমনভাবে সংবাদগুলোকে আমাদের সামনে নিরপেক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরে, পত্রিকাটি তার নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছে। যে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একটি ইমেজ তৈরি করে ফেলছে, তারা চাইবে না কোনো কারণে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে। তারা চেষ্টা করবে যেনো গবেষণা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে ন্যূনতম একটা পাবলিকেশন থাকতেই হবে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আলাদা র্যাংঙ্কিং করার আহ্বানও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার কলেজ র্যাঙ্কিং একটা মাইলফলক।
যেটা সরকারের করা উচিত ছিলো, সেই কাজটা বেসরকারি পর্যায়ে দৈনিকশিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা করেছে। এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী লেখা থাকবে। কারণ, এটাই শুরু। এই কাজের জন্য জন্য ইতিহাসের পাতায় দৈনিকশিক্ষাডটকম সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান ও তার সহকর্মীরা কৃতিত্বের দাবিদার হবেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এমন আয়োজন শুভ আয়োজন। এর মাধ্যমে কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন ঢাকা শহরের মধ্যে করা হয়েছে। সামনে এ আয়োজনের পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ১০টি কলেজও যদি নিজেদের ঘাটতিগুলো কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ নেয়, তাহলেই এ উদ্যোগ স্বার্থক হবে। তা ছাড়া এ র্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেবে বলেও মনে করেন তিনি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইরাব সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, এবারের এসএসসিতে নিজ জেলা সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর পাসের হার কমায় শঙ্কিত। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে আমার জন্মভূমি সিলেট পড়াশোনায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন সিলেট কেনো পিছিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এক সময় সিলেট থেকে বহু সিএসপি অফিসারের জন্ম হয়েছিলো। এখন সিলেটে মাধ্যমিকে পাসের হার কমছে। এটা কি হাওরের দোষ? নাকি চা বাগানের দোষ? নাকি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হয়ে যাওয়ায়? তা নিয়ে গবেষণা হলে আমরা সিলেটবাসীরা কিছুটা স্বস্তি পাবো।
জরিপের পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা হবে। এইটাই জরিপের সাফল্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ তার কন্যার হাতে আজ উন্নয়নের বাংলাদেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।
স্মার্ট বাংলাদেশ তথা ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। র্যাঙ্কিংয়ের মতো দুঃসাহসী কার্যক্রম নিয়ে দৈনিকশিক্ষাডটকমকে এগিয়ে আসতে হবে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের অন্য আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক এ অপেক্ষায়।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ