বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্মদিন আজ। সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং বিখ্যাত তিন গতির সূত্রের আবিস্কারক তিনি।
আইজ্যাক নিউটন ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে ৪ লিংকনশায়ারের উল্সথর্পম্যানরে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা বাড়ির পাশের এক ছোট্ট স্কুলে সম্পন্ন হয়। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন। এই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী, যা থেকে তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।
স্কুল জীবনেই নিউটন তার মেধার পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন। সে বয়সেই তিনি উইন্ডমিল, জল-ঘড়ি এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন। এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ছিলো একটি চার চাকার বাহন যা আরোহী নিজেই টেনে চালাতে পারতেন।
নিউটনের কাকা বার্টন কগলিসের রেক্টর তার এই প্রতিভা দেখে তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি করেন।
১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই নিউটনের বিশ্বনন্দিত গ্রন্থ ‘ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’ প্রকাশিত হয় যেখানে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিবৃত করেন। তার এ সূত্র সভ্যতা বিকাশের সোপানস্বরুপ। এ চিরায়ত বলবিজ্ঞান গবেষণা পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগতে একক আধিপত্য করেছে।
বিজ্ঞানে নিউটনের অবদান লিখে শেষ হবার নয়। নিউটন প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সঙ্গে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে বলবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেন নিউটন।
নিউটন আলোর প্রতিসরণ আবিষ্কার করেন। ১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে অপটিক্স নামক একটি গ্রন্থ লিখেন যাতে তিনি আলোর কণা তত্ত্ব বিষয়ে তার অভিমত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। শব্দের দ্রুতি এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়েও নিউটন গবেষণা পরিচালনা করেন যা থেকে নিউটনের শীতলীকরণ সূত্র এসেছে।
গণিতের জগতেও নিউটনের আধিপত্য অনস্বীকার্য। নিউটন এবং লাইবনিজ যৌথভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। এই নতুন শাখাটিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতে বিপ্লব সাধনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া তিনি পাই এর মানের জন্য একটি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেন।
নিউটন কাচের গ্লোব ব্যবহার করে একটি আদি প্রকারের ঘর্ষণ স্থির-বৈদ্যুতিক জেনারেটর তৈরি করতে সক্ষম হন।
নিউটন ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি এ বিষয়ে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে নিউটন আইনস্টাইনের চেয়েও অধিক প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।