পবিত্র হজ পালনে নিবন্ধনের সময় আজ বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই সময় শেষবারের মতো বাড়িয়ে ২১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চারবার বাড়ানো হলো চলতি মৌসুমে হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময়।
আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৮৪৭ জন। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৬৮৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১ হাজার ১৬৪ জন নিবন্ধন করেছেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছর হজে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের জন্য কোটা রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন ১৫ হাজার জন। অন্যরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক্-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক ৪৫ হাজার ৬০৫ পর্যন্ত ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক্-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক ৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৯০ পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় পাঁচ দিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এরপর নিবন্ধনের শেষ সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ করা হয়। এই সময় আরেক দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৬ মার্চ।
এবার বাংলাদেশে সরকারিভাবে হজে যেতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর মধ্যে সৌদি আরব অংশের ব্যয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আর বাংলাদেশ অংশের ব্যয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ টাকা। বাংলাদেশ অংশের ব্যয়ের বড় খাত বিমানভাড়া প্রায় দুই লাখ টাকা।
গত বছরের চেয়ে এবার হজ পালনের খরচ দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে।
প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে এ খরচ বেশি নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানে এ বছর হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ রুপি; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৫ টাকা। আর ভারতে সরকারিভাবে ব্যয় হবে চার লাখ রুপির কাছাকাছি; যা বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ লাখের কিছু বেশি। এ দুই দেশের তুলনায় হজ পালনে বাংলাদেশে খরচ হবে গড়পড়তা দেড় লাখ টাকার বেশি।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতি বলেন, এবার হজের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নিবন্ধন করা নিয়ে সমস্যায় পড়েন।
গত বছরের তুলনায় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ নিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের টাকার সঙ্গে সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি, বিমানভাড়া বৃদ্ধি, পবিত্র মক্কা ও মদিনায় ব্যাপকসংখ্যক বাড়ি সৌদি সরকার ভেঙে ফেলায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। হজযাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় উন্নত মানের বাস সার্ভিস, অতিরিক্ত বাস সার্ভিস ও ট্রেন সার্ভিস গ্রহণ করা হয়েছে। দূরবর্তী ও পাহাড়ি এলাকার পরিবর্তে মক্কা (মিসফালা ও ইব্রাহিম খলিল রোড এলাকা) ও মদিনায় সমতল এলাকায় বাসা ভাড়া করা হয়েছে। হজ চুক্তি অনুযায়ী মক্কা রোড সার্ভিসের জন্য সার্ভিস চার্জ আরোপ করে ও হজযাত্রীদের জন্য ডেডিকেটেড ফ্লাইট নিশ্চিত করার কারণেও ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
এদিকে মিনার তাঁবুর সুযোগ-সুবিধা, জামারা হতে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় মিনা এলাকাকে সৌদি সরকার চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে চার ধরনের সার্ভিস চার্জ ধার্য করেছে। এ ক্যাটাগরির সার্ভিস চার্জ ১০,২৪৮ সৌ.রি (২৮.৩৯ টাকা হিসাবে ২,৯০,৯৩০ টাকা)। বি ক্যাটাগরির সার্ভিস চার্জ ৭,৯১২ সৌ.রি (২,২৪,৬২২ টাকা)। সি ক্যাটাগরির সার্ভিস চার্জ ৫,৬৫৮ সৌ.রি (১,৬০,৬৩০ টাকা)। ডি ক্যাটাগরির সার্ভিস চার্জ ৪,৭৯৫ সৌ.রি (১,৩৬,১৩০ টাকা)। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের মিনায় সি ক্যাটাগরির তাঁবু গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।