হরতাল-অবরোধে দুশ্চিন্তায় সাড়ে তিন কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  হঠাৎ হরতাল-অবরোধসহ রাজপথে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হওয়ায় সাড়ে তিন কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক  এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।  জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এজন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য ডিসেম্বর মাসে যাতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, সেজন্যও এ বছর আগেভাগে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে চায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।

এ ছাড়া চলতি বছর থেকে তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর আরও চারটি শ্রেণিতে তা চালু হবে। এজন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। আর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই স্কুলগুলোতে নতুন বই পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে নভেম্বর মাসটি শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাতেই বাধার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে ভয়ে আছি, উদ্বেগে আছি। বিশেষ করে রাস্তা দিয়ে চলাচলেই বেশি ভয় পাচ্ছি। এ ছাড়া বাচ্চারা বিভিন্ন মাধ্যমে আগুন, ভাঙচুরের ঘটনা দেখে তাদের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছে। আর কয়েক দিন পরেই বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমরা সহিংস কোনো কর্মসূচি চাই না।’

গত ২৯ অক্টোবর বিএনপিসহ সমমনা দলের ডাকে সারা দেশে হরতাল পালিত হয়েছে। আবার গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের অবরোধ। ফলে অভিভাবকরা আতঙ্কিত। অবরোধের মধ্যে স্কুল-কলেজগুলো খোলা রাখলেও উপস্থিতি কমে গেছে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা রয়েছে তারা তা পেছাতে বাধ্য হয়েছে।  সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকদের উপস্থিতিই কমে গেছে। 

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপিসহ সমমনা দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, যা নভেম্বর মাসে আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা নিয়ে ইতিমধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

তবে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানান, ‘স্কুলগুলোতে ৯ নভেম্ব থেকে বার্ষিক মূল্যায়ন শুরু হবে। তাই এখনই অন্য কোনো বিষয় ভাবার সময় আসেনি। আমরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে’। 

জানা যায়, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে বেশ আগেই একটি সময়সূচি নির্ধারণ করে দিয়েছিল মাউশি অধিদপ্তর। সেখানে ৫ নভেম্বর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে ৯ নভেম্বর থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে এখনো পরীক্ষা শেষ করার সময় ৩০ নভেম্বরই রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের দুই পরীক্ষার মধ্যে সময় কমে আসবে। গত সোমবার এ সংক্রান্ত সংশোধিত চিঠি স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

মাউশি অধিদপ্তর তাদের চিঠিতে মূল্যায়ন পেছনোর পেছনে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ দেরিতে শেষ হওয়ার কথা বলেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে মাধ্যমিকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। তাই বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫ নভেম্বরের পরিবর্তে ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। তবে ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যস্ত থাকবেন, তাই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। জানা যায়, রাজধানীর বেশ কিছু স্কুলে ১ নভেম্বর (আজ) থেকে প্রাথমিকের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবরোধের কারণে তা পিছিয়ে ৫ নভেম্বর থেকে শুরু করার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষাও পিছিয়েছে। তবে উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো সেভাবে প্রভাব পড়েনি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। আর বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই হরতাল-অবরোধে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে।

শিক্ষকরা জানান, রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরেই হরতাল-অবরোধের প্রভাব বেশি পড়ছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসায় বেশি ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা। গ্রামগঞ্জে রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাব খুব বেশি না থাকলেও সারা দেশের স্কুল-কলেজ একই শিক্ষাপঞ্জি মেনে চলে। গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতেও কাছাকাছি সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়। কারণ শহরাঞ্চলের স্কুলগুলো তারা নিজেরাই তাদের প্রশ্ন তৈরি করে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনো বেশ কিছু স্কুল একসঙ্গে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয় বা শিক্ষকদের সমিতি থেকে প্রশ্ন কিনে নেয়। এজন্য মফস্বলেও একেক স্কুলের একেক দিন পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির প্রায় সাতে তিন কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যেই হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়বে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041711330413818