বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শের-ই-বাংলা হলে ঢুকে মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত এবং জি এম ফাহাদ নামে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করেছে হেলমেট পরিহিত একদল দুর্বৃত্ত। আহতরা বর্তমানে শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ভোরে শের-ই-বাংলা হলের ৪০১৮ নম্বর রুমে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, 'ফজরের আজানের পর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ করে হেলমেট পরিহিত ১০-১৫ জন হলে ঢুকে সব রুম বাইরে থেকে আটকে দেন। পরে তারা ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাতকে রুম থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে এবং জি এম ফাহাদের হাত ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি তাকেও কুপিয়ে জখম করে।'
আহত ফাহাদ বলেন, 'হামলাকারীরা সবাই হেলমেটধারী ছিলেন। তবুও তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। হামলাকারীদের মধ্যে আলীম সালেহী, অমিত হাসান রক্তিম, রিয়াজ মোল্লা, সৈয়দ জিসান আহম্মেদসহ অন্তত ১০-১২ জন ছিলেন। তারা সবাই আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।'
হামলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ মোল্লা বলেন, 'সিফাতের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ। তারা সিফাতের অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাকে প্রতিহত করেছে বলে আমার ধারণা। এ ছাড়া সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় জমি দখল থেকে শুরু করে, শিক্ষার্থীদের মারা এবং তাদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়াসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। বহু মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত। এখন কারা তার ওপর হামলা করেছে, সেটা বলতে পারব না।'
এদিকে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই বলে জানিয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম। হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে, হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধসহ প্রতিবাদমূলক কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানাচ্ছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত। আর অমিত হাসান রক্তিম পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামীমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এর আগেও এই ২ গ্রুপের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আহত সিফাতের শরীরে জখম রয়েছে। তার পা ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর ফরহাদের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং তার হাতও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।'
মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, 'আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সুস্থ হলে আরও ভালোভাবে মূল ঘটনা জানতে পারব। হামলাকারী কারা, সেই বিষয়টি এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর বলেন, 'গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সিফাত ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাহাদের ওপর অতর্কিত হামলায় তারা গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। পুরো বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে।'
ববি প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ঘটনা তদন্তে কমিটি হবে। এর আগে সিফাতের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও পরে সেগুলো মিটমাট করে ফেলা হয়েছিল।