রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়হলের খাবারে নেই ভর্তুকি, থাকছে না পর্যাপ্ত আমিষও

রাবি প্রতিনিধি |

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। রেহাই পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরাও। হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। খাবারে থাকছে না পর্যাপ্ত আমিষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা। খাবার মানের বেহাল দশায় বিপাকে পড়ছেন তারা। খাবারের দাম ও মান ঠিক রাখতে প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। দেয়া হয় না কোনো ভর্তুকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত দোকানগুলোতে খাবারের দাম আকাশচুম্বী। তাই চাইলেই একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তা খেতে পারেনা। আবাসিক হলগুলোতে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে।

প্রতিবেলায় খাবারের পূর্ব মূল্য থেকে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে দুপুরের খাবার ২৪ টাকার পরিবর্তে ২৮ টাকা এবং রাতের খাবার ১৮ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকা করা হয়েছে।

সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ডাইনিংয়ে যে ধরনের খাবার দেয়ার কথা ছিল, তা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। মাছ বা মাংসের উপস্থিতি থাকলেও তা নামমাত্র। এসবের খাবারের মান উন্নত করার পরিমাণ একেবারেই নগন্য। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে খাবারের মান বৃদ্ধিতে নজর দিচ্ছে না প্রশাসন। এদিকে জ্বালানি তেলের হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মেনে নিতে নারাজ অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের বাজেট নিয়ে। অর্থাভাবে তারা অনেক ক্ষেত্রে সকাল এবং দুপুরের খাবার একসাথে খাচ্ছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে। দ্রব্যমূল্য বাড়লেও তাদের ফি কিন্তু বাড়েনি। অনেকের প্রতিদিনের খরচ নির্দিষ্ট করা থাকে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাজেট ঘাটতি পড়ে। এমনকি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে প্রত্যেকটি দোকানে খাবারের দাম বেড়েছে। কিন্তু খাবারের মান ও পরিমাণ কমেছে।

ভর্তুকির দেয়ার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী পলাশ মিয়া বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে আমাদের ডাইনিং এর খাবারের দামও বেড়েছে। বাড়েনি শুধু আমার বাবার টাকা। আমার পরিবারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কিছুদিন আগেও মাসিক ৩০০০ টাকার বেশি খরচ হতো না। কিন্তু এখন একবেলা না খেয়েও ৪০০০ টাকায় মাস পার হচ্ছে না। এখন সকালের খাবার মাইনাস করে দুই বেলা খাচ্ছি। তবুও টাকা বেশি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ভর্তুকি দিয়ে খাবারের মান ঠিক রাখা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিরাজাম মুনিরা বলেন, একজন শিক্ষার্থী ডিমের উপর বেশি নির্ভর করে। সেই ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ, ডিম, মাংস খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি একপ্রকার। হলের ডাইনিং এ যে মানের খাবার দেয়া হয়, তাতে আমাদের ক্যালরির যে ঘাটতি তা পূরণ হয় না। পুষ্টিহীনতায় ভুগছি আমরা। প্রশাসন থেকে ভর্তুকি দেওয়াটা এখন সময়ের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ফেরদৌসি মহল  বলেন, করোনার আগে ফুয়েল চার্জ নামে এক বছরে ছাত্র প্রতি এক টাকা করে দেওয়া হতো। সেই হিসেবে কোনো হলে এক হাজার টাকা আবার কোনো হলে দেড় হাজার টাকা বা তার কম বেশি পেত। কিন্তু ইউজিসি এটাতে আপত্তি জানায়। এই খাতে ইউজিসি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে আমরা করোনার পর থেকে ফুয়েল চার্জের জন্য আর টাকা দিতে পারি না। ইউজিসিকে অমান্য করে তো আর আমরা কিছু করতে পারি না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম  বলেন, হলের খাবারের দাম ও মান ঠিক রাখা প্রভোস্টের দায়িত্ব। ছাত্ররা যদি দাম ও মানে সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দিবে। যদি প্রভোস্ট সমাধানে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা বিষয়টা দেখবো। আমরা চাই না যে খাবারের দাম বেশি নিয়ে মান নগন্য থাকুক।  আর ইউজিসি যদি ভর্তুকির বিষয়টি অনুমোদন না দেয় তাহলে আমরা ভর্তুকি দিতে পারি না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখতিয়ারে নেই বলে জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027379989624023