হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা

দৈনিক শিক্ষাডটকম গোপালগঞ্জ |

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কাশিয়ানীতে ১৬৯টি বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়। ৩৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব মেশিন কেনা হলেও এগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে আসেনি। কেনার পাঁচ বছর পরও মেশিনগুলো চালু হয়নি। ফলে গচ্চা গেছে সরকারের লাখ লাখ টাকা। এসব মেশিন ক্রয় নিয়েও রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।  জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশে নির্ধারিত কোম্পানি থেকে মেশিন কেনায় বাজার যাচাইয়ের সুযোগ পাননি শিক্ষকরা। এভাবে বড় ধরনের দুর্নীতি করে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে একটি সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাজিরা মেশিনগুলো স্থাপনা করা হয়। এসব মেশিন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ আল বাকী ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া কোম্পানি থেকে কেনা হয়। ‘এইচআর অটোমেশন’ নামে একটি কোম্পানি ‘ইনোভয়েস’ ব্র্যান্ডের হাজিরা মেশিন সরবরাহ করে। বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে মেশিন কেনার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করেন শিক্ষকরা। প্রতিটি মেশিন ২২ হাজার টাকা মূল্যে কেনা হয়। যদিও বাজারে এ মেশিনের দাম ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।

অথচ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে পছন্দমতো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনে স্কুলে স্থাপন করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন কেনার বাধ্যবাধকতা নেই। এ ব্যাপারে কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ উপেক্ষা করে কেনা এসব মেশিন কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ে চালু হলেও কয়েক দিনের মধ্যে তা অকেজো হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ মেশিন ব্যবহারের আগেই বিকল হয়ে গেছে। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেশিনগুলো সচল হয়নি। উপজেলার অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে কোথাও হাজিরা মেশিন সচল পাওয়া যায়নি। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ মেশিনের ব্যবহার সম্পর্কে জানেনই না। 

খায়েরহাট জলকরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিতারা বেগম বলেন, তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ আল বাকী ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা ‘এইচআর অটোমেশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। তাদের নির্দেশে স্কুল উন্নয়নের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে ২২ হাজার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেশিনটি চালু হয়নি। অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

কাশিয়ানী উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, তিনি ১৫টি বিদ্যালয় ঘুরে দেখেছেন, সব মেশিন অকেজো। মেশিনগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষকরা মেশিন কিনেছিলেন। তাদের সেখানে কোনো কিছু বলার ছিল না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশনের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ বলেন, এ ক্ষেত্রে কোম্পানির গাফিলতি ও কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। মেশিনগুলো মানসম্পন্ন। মেশিন স্থাপনের পর ইন্টারনেট সংযোগ লাগে। এ জন্য ৫ হাজার টাকা রিচার্জ, সার্ভার এবং সার্ভিস চার্জ রয়েছে। শিক্ষকরা এ টাকা না দেওয়ায় মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

কাশিয়ানী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা হাজিরা মেশিন অকেজোর কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তিনি তখন দায়িত্বে ছিলেন না। তৎকালীন এডিসি ও ডিপিওর সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি করা হয়। ওই কমিটির মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়। এখানে উপজেলা কর্মকর্তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।

তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কুমার সাহা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ আল বাকীর নির্দেশে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫টি কোম্পানি মেশিন সরবরাহ করে। কাশিয়ানীতে এইচআর অটোমেশন কোম্পানি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সরবরাহ করে। কোনো কোম্পানির সঙ্গে তাঁর (আনন্দ) সংশ্লিষ্টতা নেই। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024440288543701