হাজী মুহম্মদ মোহসীনের মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

হাজী মুহম্মদ মোহসীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম, চিরকুমার ও মহান জনহিতৈষী ব্যক্তি। ১৭৬৯-৭০ খ্রিষ্টাব্দের সরকারি দলিল থেকে জানা যায়, ওই সময়ের মহাদুর্ভিক্ষে তিনি বহু লঙ্গরখানা স্থাপন করেছিলেন এবং সরকারি সাহায্য তহবিলে অর্থ দিয়েছিলেন। ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে হুগলিতে তার জন্ম। তার পিতা হাজী ফয়জুল্লাহ এবং মাতা জয়নাব খানম। এটি ছিলো জয়নাবের দ্বিতীয় বিয়ে। তার প্রথম স্বামী আগা মোতাহার ছিলেন একজন ইরানি ব্যবসায়ী। তিনি হুগলিতে বসতি স্থাপন করেন এবং হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় বিস্তীর্ণ জায়গির লাভ করেন। তিনি তার বিপুল সম্পত্তি তার একমাত্র কন্যা মন্নুজান খানম-এর নামে উইল করে যান। ফয়জুল্লাহর পিতাও ছিলেন একজন ইরানি এবং জায়গিরদার।

মোহসীনের জন্ম এক ধনী পরিবারে এবং ফয়জুল্লাহ তার পুত্রকে সেই আমলের সম্ভাব্য শিক্ষায় যথেষ্ট শিক্ষিত করে তোলেন। একজন গৃহশিক্ষক মোহসীন ও তার সৎ বোন মন্নুজানকে শিক্ষা দিতেন। মনোযোগী ছাত্র হিসেবে মোহসীন কুরআন, হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে অসামান্য ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। পরে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে বাংলা সুবাহর তৎকালীন রাজধানী মুর্শিদাবাদ গমন করেন। ভ্রমণ মানুষের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে এই বিশ্বাসে তিনি খুব শীঘ্রই বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। তিনি ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি মক্কা, মদীনা, কুফা, কারবালা প্রভৃতি তীর্থস্থানে যান।

ইতোমধ্যে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন এবং তার একমাত্র বোন মন্নুজান হুগলির নায়েব-ফৌজদার ও একজন দায়িত্ববান  পুরুষ  মির্জা সালাহউদ্দীনের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। অল্পবয়সে বিধবা হয়ে যাওয়া নিঃসন্তান মন্নুজান তার সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য মোহসীনকে ব্যাকুলভাবে দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান। বোনের সনির্বন্ধ অনুরোধে মোহসীন দীর্ঘ ২৭ বছর পর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে মন্নুজানের মৃত্যুর পর মোহসীন তার বিশাল সম্পত্তি লাভ করেন। জমকালোভাবে ধর্মীয় আচারাদি ও উৎসব পালনে তিনি তার পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রেখেছিলেন। কঠোর তপস্বী মোহসীন ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন এবং দুজন মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করেন। তিনি তার সম্পত্তিকে নয়টি শেয়ারে ভাগ করেন। তিনটি শেয়ার ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য; পেনশন, বৃত্তি এবং দাতব্য কাজে ব্যয়ের নিমিত্ত চারটি শেয়ার এবং দুটি শেয়ার রাখা হয় মুতাওয়াল্লিদের বেতন হিসেবে। মোহসীন খুব সাধারণ ও ধর্মীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। 

মুতাওয়াল্লিদ্বয় তহবিল তসরুফ করায় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে  সরকার মোহসীন ফান্ড-এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেয়। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্জিত সম্পত্তির বর্ধিত অংশ বিভিন্ন দালান-কোঠা নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়। উনিশ শতকের পঞ্চাশ-এর দশকে নির্মিত এই সকল দালান-কোঠার মধ্যে ছিলো আবাসস্থল, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, হাসপাতাল, সমাধিসৌধ ও ইমামবারার ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি বাজার। বাংলার এই মহান ব্যক্তি ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। তার মৃত্যুর পর হুগলির ইমামবাড়ায় তার সমাধির ওপর সৌধ স্থাপন করা হয়। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ - dainik shiksha অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি - dainik shiksha আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035369396209717