অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের কৃষক নেতা ও রাজনীতিক হাজী মোহাম্মদ দানেশ এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুন দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে বিএল ডিগ্রি লাভ করে হাজী দানেশ দিনাজপুরে আইনব্যবসা শুরু করেন।
তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং উত্তরবঙ্গে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তার নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং কারাভোগ করেন। নীলফামারি জেলার ডোমারে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পরপরই তিনি গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন।
হাজী দানেশ ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই বঙ্গীয় সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হাজী দানেশ ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। হাজী দানেশ মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন।
তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার নামানুসারে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুর কৃষি কলেজ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এ উন্নীত হয়।