জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাংবাদিক কলি হাসানকে হাতুড়িপেটা করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক কলি হাসানের স্ত্রী সাজেদা আক্তার সাজু বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গত ৯ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুর্গাপুর পৌরসভার বাগিচাপাড়া এলাকার টিচার্স লেন সংলগ্ন রাস্তায় ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, পরিকল্পিতভাবে কলি হাসানের পথরোধ করে অতর্কিত আক্রমণ করে দুর্গাপুর পৌরসভার খরস এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে হান্নান মিয়া (৩৮) ও একই উপজেলার চন্তিগড় ইউনিয়নের দিবারপাড়া এলাকার ইমাম হোসেনের ছেলে আসাদ (৩৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজন। এ সময় তারা তাকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। কলি হাসান নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তার ডান হাত ভেঙে ফেলে। পরে ডান পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করে মারাত্মক জখম করে।
হামলা চলাকালে তারা দুটি মোবাইল ফোনসেট ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় কলি হাসানের চিৎকারে আশপাশের বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় তারা এই সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়।
সাংবাদিক কলি হাসান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বেডরেস্ট অবস্থায় রয়েছেন। সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তিনি খুবই দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন। তার ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের তিনি উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
এ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতি ও সুশীল সমাজের নাগরিকরা। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
সাংবাদিক কলি হাসান দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করছেন। তিনি বর্তমানে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার দুর্গাপুর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া তিনি দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এদিকে গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশীগঞ্জ পাটহাটি পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।
এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় নাদিমকে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাদিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।