লোকলজ্জার কাছে হার মেনেছে মায়ের ভালোবাসা। গর্ভজাত সন্তানকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ফেলে গিয়েছেন নির্জন সড়কের পাশে। শুক্রবার ভোরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালশার সড়কের পাশ থেকে রক্তমাখা শরীরে জীবিত এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে সোনিয়া নামের এক গৃহবধূ।
গৃহবধূ সোনিয়া জানান, ভোর ৬টার দিকে বাবার বাড়ি কুশনা- তালশার সড়কে হাটতে যাই। এসময় সড়কের পাশেই একটি কাপড়ে মোড়ানো রক্তমাখা অবস্থায় ওই নবজাতককে দেখতে পেয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নবজাতককে তিনি বাড়িতে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ নবজাতকসহ ওই গৃহবধূকে আসতে বলেন।
সোনিয়া উপজেলার কুশনা বাজার পাড়ার রোকন মন্ডলের মেয়ে ও বলুহর রামচন্দ্রপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী রানা হামিদের স্ত্রী। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গত এক মাস আগে আমার প্রথম বাচ্চা জন্মের পরই মারা যায়। আল্লাহ পাক এই বাচ্চাটিকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি এই বাচ্চার লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে চাই।
এলাকাবাসী জানান, লোকলজ্জার ভয়ে হয়তো কেউ নিষ্পাপ শিশুটিকে নির্জন জায়গা পেয়ে ফেলে গেছে। সময়মতো নবজাতক শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ায় সে প্রাণে বেঁচে গেছে। না হলে হয়তো নবজাতকটি কোনো বন্যপ্রাণীর খাবারে পরিণত হতে পারতো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. তারুণি পাশা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সোনিয়া নামে এক গৃহবধূ একদিন বয়সের ওই নবজাতককে নিয়ে আসেন। প্রাথমিকভাবে কোনো সমস্যা না থাকায় তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে জানতে পারি নবজাতকটি সড়কের পাশে পড়ে ছিলো।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে নবজাতক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে নবজাতককে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেয়া হয়েছে। যদি বাবা-মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে বাবা-মায়ের কাছেই ফিরিয়ে দেয়া হবে। না, হলে কেউ যদি দত্তক নিতে চায়, তাহলে নিয়মানুযায়ী নবজাতকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।