মুন্সীগঞ্জে হাসপাতালের ভেতরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে শহরের মানিকপুর রোডে জেনারেল হাসপাতালের ছাদে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ছাত্রলীগ নেতা শেখ শাকিলকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা করেন।
সূত্রমতে, ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর মা ১৩ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন। অভিযুক্ত শেখ শাকিল মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা দুই নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সে সদর উপজেলার চরকেয়ার ইউনিয়নের চরমশুরা গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে শহর আফতাব কমপ্লেক্সে বসবাস করছে।
সূত্র জানায়, ওই কিশোরীর শিশুকালে তার বাবা মারা যায়। সংসারে ভরণ-পোষণের কেউ না থাকায় তার মা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ নেন। তখন থেকে মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২৪ ঘণ্টা মা মেয়েটিকে নিজের কাছে রাখতো। এর ধারাবাহিকতায় চাকরিতে থাকলেও মেয়েকে তার কাছে রাখতো। হাসপাতালের সবার কাছেও মেয়েটি খুব পরিচিত।
মঙ্গলবার রাতে মেয়েটির সঙ্গে তার মার মনোমালিন্য হলে সে হাসপাতালে চলে আসেন। ইমারজেন্সি রুমের সামনে ঘোরাঘুরি করতে থাকে মেয়েটি। রাত ১২টার দিকে দু’টি ছেলে তাকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানে ছেলে দু’টি মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি তখন বলে, আমার ভাই জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। সে সময় শেখ শাকিল সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই দুই ছেলেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে মেয়েটিকে জোর করে হাসপাতালের ছাদে নিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে মেয়েটি কান্নাকাটি করলে ধর্ষক শাকিল মেয়েটিকে মারধর করে। মেয়েটি কান্নাকাটি করে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে বাসায় ফিরে তার মাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।
পরদিন বুধবার বিকালে হাসপাতালের পশ্চিম পাশে এ ঘটনা নিয়ে সালিশ বসে। সালিশে নেতৃত্ব দেয় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহেল ও মানিকপুরের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা সাদ্দামের নেতৃত্বে একটি দল। তারা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মেয়েটির মাকে ৩০ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে গতকাল দুপুর ২টায় হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়েটির মা জানান, আমার একটি ছেলে আছে। আমি চাই না মেয়েটির জন্য ছেলেটির কোনো ক্ষতি হোক। কিছু লোক আমাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে, শেখ শাকিলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শাকিল বলেন, মেডিকেল টেস্টের সমস্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রিপোর্ট হাতে আসলে আমরা বলতে পারবো। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান জানান, কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় শাকিল নামের একজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে। পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ মনজুরুল আলম বলেন, এই আয়া আমাদের এখানে বেসিক হিসেবে চাকরি করতো। ঘটনাটির তদন্ত চলছে আমাদের পক্ষ থেকে। কীভাবে ঘটলো, কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা তদন্ত করে জানার চেষ্টা করছি। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সার্বিকভাবে যোগাযোগ রাখছি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, শেখ শাকিল শহর ছাত্রলীগের নেতা হতে পারে। আমি তাকে চিনতে পারছি না। তবে ঘটনা সত্যি হলে শহর ছাত্রলীগকে এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হবে।