গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ছয়টি লিফটের মধ্যে চারটিই নষ্ট পড়ে আছে। এতে রোগী নিয়ে সুউচ্চ এই হাসপাতাল ভবনে ওঠা-নামা করতে গিয়ে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
কয়েকজন রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ তলার হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার হলেও সেখানে নিয়মিত সাতশ থেকে আটশ রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেন। অথচ এই বিশাল সংখ্যক রোগীদের জন্য ওঠা-নামার সচল রয়েছে মাত্র দুটি লিফট।
লিফটগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ‘ময়লা জমে’ ও ‘যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে লিফটগুলো বিকল হয়ে আছে। ‘দ্রুত’ সময়ের মধ্যে সারাইয়ের পর সেগুলো সচল করা হবে।
শনিবার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সচল লিফট দুটির সামনে রোগী ও তাদের স্বজনসহ বহু মানুষ অপেক্ষায় আছেন।
সেখানে কথা হয়, গাজীপুর নগরীর ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পিত্তথলির চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হাসপাতালের আট তলায় সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। জরুরি কাজে নিচে নামার পর আবার উপরে উঠতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাকে।
নাসির বলছিলেন, “আট তলায় আমার পক্ষে সিঁড়ি্ দিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই প্রায় ২০ মিনিট ধরে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এত সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকাও অনেক কষ্টের ব্যাপার। শুধু আমি না; শত শত রোগী প্রতিদিন এভাবে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছে।”
নগরীর নলজানি এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের স্বামীও ওই একই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসকের পরামর্শে। মাত্র দুটি লিফট দিয়ে ওঠা-নামায় ভোগান্তির কথা জানালেন এ দম্পতিও।
সুফিয়া বলেন, “আট তলায় উঠতে দুই লিফটের মধ্যে একটির সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও উঠতে না পেরে পাশেরটায় গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। তারপরও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ভিড় ঠেলে উঠতে পারিনি।”
ভোগড়া মধ্যপাড়া নায়েব বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা লুৎফর রহমান ১০ তলায় ভর্তি এক রোগী দেখতে গিয়ে একই বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, “লিফট দিয়ে উঠলেও শেষে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছি।”
হাসপাতালের দক্ষিণ পাশের ১ নম্বর লিফটি প্রায় ছয় মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে বলে লিফট অপারেটর মো. সিয়াম হোসেন জানান।
তিনি বলেন, “১০-১২ দিন ধরে অকেজো হয়ে আছে চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর লিফটি। বর্তমানে হাসপাতালটির ১৩ তলা পর্যন্ত দুইটি লিফট চলাচল করছে।”
ভোগান্তির বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালের লিফটগুলি গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ তদারকি করেন। এ সমস্যার সমাধানের জন্য গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।”
“দু-একদিনের মধ্যেই লিফটগুলো সারাইয়ের পর সচল করা হবে বলে জানিয়েছেন, তাদের কর্মকর্তারা। তবে এক নম্বর লিফটি দীর্ঘদিন কোনো বন্ধ রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।”
গণপূর্ত বিভাগ গাজীপুরের নির্বাহী প্রাকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, “ময়লা জমে ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লিফটগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই দুটি লিফট সচল হয়ে যাবে।”