অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন শেখ হাসিনা একজন রক্তচোষা ও সাইকোপ্যাথ (মানসিকভাবে অসুস্থ) ।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের এক রোববার সন্ধ্যায় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বসে মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
কয়েক মাস আগেও নাহিদ ইসলাম তথ্য-প্রযুক্তি পড়াতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গ্রেফতার এড়াতে গাঢাকা দিতেও বাধ্য হন তিনি।
বর্তমানে তিনি আইসিটি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (উপদেষ্টা)।
নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটাব্যবস্থা নিয়ে প্রথম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। তখন সরকার শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলে বিক্ষোভের সমাপ্তি ঘটে। এ বছরও সরকার পিছিয়ে গেলে কোটাব্যবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শেষ হয়ে যেতে পারত।
তবে নিরাপত্তা বাহিনী কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নামের এক ছাত্রনেতা নিহত হন। পুলিশের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক টান করে দাঁড়ালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা মান। সেই হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের জন্য গেম-চেঞ্জিং মুহূর্তে পরিণত হয়।
ছাত্র আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে জনসংখ্যার একটি বড় অংশের সমর্থন পায়। এ আন্দোলন দেশের মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রকাশ করার একটি সুযোগ করে দেয়। দ্রুতই আন্দোলনকারীদের দৃষ্টি পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। ৩ আগস্ট ছাত্ররা তাঁর পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেই দাবির ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম।
৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতা ঢাকায় শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে তিনি হেলিকপ্টারে পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনো সে দেশেই নির্বাসিত রয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কেউ ভাবেনি তাঁর (শেখ হাসিনার) উত্খাত হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন নাহিদ ইসলামের চেয়ে বড় পদে আছেন। তাঁদের মধ্যে কে কার কাছ থেকে আদেশ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস সব বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।’
মন্ত্রণালয়ে নিজের টেবিলে একটি লাল ল্যান্ডলাইনের দিকে দেখিয়ে নাহিদ বলেন, ‘ভিআইপি ফোন। এটি কী জন্য ব্যবহার করা উচিত, আমি জানি না। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করি।’
আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে এক বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে ছিলেন নাহিদ। এক রাতে সাদা পোশাকে প্রায় ৩০ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। নাহিদ বলেন, ‘তাঁদের মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বলা হয়, পৃথিবী আর কোনো দিন তোমাদের দেখতে পাবে না।’
নাহিদের বিশ্বাস, গোপন কারাগারে তাঁকে রাখা হয়েছিল। তাঁকে পেটানো হয়। তাঁর মনে হচ্ছিল, লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল। হাতে-পায়ে পেটানোর দাগও ছিল। ব্যথা, যন্ত্রণাদায়ক শব্দ এবং উজ্জ্বল আলোর তীব্রতায় তাঁর মাথা ঘোরাচ্ছিল; তিনি মাঝে মাঝেই অচেতন হয়ে যাচ্ছিলেন ওই সময়।
নাহিদ বলেন, ‘কর্মকর্তারা জানতে চাচ্ছিলেন, ‘মাস্টারমাইন্ড কে? টাকা কোত্থেকে আসছে? তুলে নেওয়ার এক দিন পর নিজেকে একটি ব্রিজের পাশে আবিষ্কার করি। গোয়েন্দা বাহিনী কেবল পরিচিত মুখদের, বিশেষ করে আমাদের আন্দোলনের নেতার খোঁজ করছিল। তবে আমরা শুধু একজন ছিলাম না। এটিই ছিল আমাদের প্রধান শক্তি।’ সূত্র : টাইম