লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কখন ও কিভাবে প্রতিশোধমূলক শক্তি প্রয়োগ করবেন সে বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত রবিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সোমবার দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর লড়াই নতুন আকার নেওয়ার শঙ্কায় লেবাননে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
লেবানন সরকার জানিয়েছে, দেশ রক্ষায় তারা আন্তর্জাতিক, ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সও উত্তেজনা সংহত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। গোলান মালভূমিতে গত শনিবার একটি ফুটবল খেলার মাঠে রকেট হামলায় ১২ ইসরায়েলি শিশু-কিশোরের প্রাণহানি ঘিরে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই হামলার জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে।
তবে হিজবুল্লাহ অভিযোগটি অস্বীকার করেছে। এই হামলার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি মন্ত্রীরা এক জরুরি বৈঠকে বসেন। কয়েক মাসের মধ্যে ইসরায়েল অধিকৃত গোলানের অংশে রকেট নিক্ষেপের এই ঘটনা দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী আন্তঃসীমান্ত হামলা। এই হামলা ঘিরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সবচেয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সংযত হওয়ার আহবান জানিয়ে আসছে। গোলান মালভূমির মাজদাল শামসে হামলার ঘটনার পর ইসরায়েল ও লেবানন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তারা এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত এবং এক শিশু আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকির মুখে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ফ্লাইট বাতিল করেছে ফ্রান্স এয়ারলাইনস, সুইস এয়ারলাইনসসহ একাধিক বিমান প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার বৈরুত বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়। অনেক যাত্রী টার্মিনালের বাইরে তাদের গাড়িগুলোতে বসে থাকে। বৈরুতের বিমানবন্দর ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, রাতভর আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন ওড়াউড়ি করেছে। আলজাজিরা জানায়, নতুন আক্রমণের ঢেউগুলো পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে বলে লেবাননে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইসরায়েল আক্রমণ চালালে তা লেবাননের অবকাঠামো, নাকি শুধু হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। হামলা চালালে হিজবুল্লাহ কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেবে তা নিয়েও বিস্তর চর্চা হচ্ছে। যদি সীমিত মাত্রার হামলা হয় তাহলে হয়তো এই সংঘাত সংযত পর্যায়ের হতে পারে। কিন্তু যদি বেপরোয়া কোনো হামলা হয় তাহলে সীমান্তে যে পাল্টাপাল্টি লড়াই চলে আসছে, তা হয়তো আরো বিস্তৃত হয়ে যেতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোর অনুমান, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কাছে দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম।
সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা