হিথ স্ট্রিক মারা যাননি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর। জিম্বাবুয়ের বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা শোক প্রকাশ করেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। রয়টার্স ও বিভিন্ন এজেন্সিসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল খবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা গেল, এখনও বেঁচে আছেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।

জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার হেনরি ওলেঙ্গা সামাজিক মাধ্যমে জানান, মৃত্যুর খবরটি গুজব। স্ট্রিকের সাবেক এই সতীর্থ নিজেও আগে মৃত্যুর খবর জানিয়ে শোক জানিয়েছিলেন। পরে মুছে দেন সেসব লেখা। ইংল্যান্ডের দা গার্ডিয়ানসহ অনেক সংবাদমাধ্যমই সরিয়ে নেয় খবর।

ওলোঙ্গা পরে জানান, "স্ট্রিকির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আজকে সকালেই তার সঙ্গে দেখা করেছে রেমন্ড প্রাইস (জিম্বাবুয়ের সাবেক স্পিনার)। যদিও বেঁচে থাকলেও তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়। এখন তাকে অনেকটা চেনাই কঠিন।"

প্রাইস নিজেও ফেইসবুকে জানান যে মৃত্যুর খবরটি গুজব, "ফেইসবুকে ও অন্যান্য জায়গায় লোকে যেমনটি বলছেন, আসলে হিথ স্ট্রিক কিন্তু বিদায় নেননি। সত্যি বলতে, আমরা এখন একসঙ্গে তার বারান্দায় বসেই চা পান করছি ও সূর্যোদয় দেখছি।"

সাবেক বাঁহাতি স্পিনার প্রাইস পরে স্ট্রিকের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন ফেইসবুকে।

তার মৃত্যুর খবর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার কারণ ছিল অবশ্য যথেষ্টই। গত মে মাসে জানা যায়, কোলন ও লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ট্রিক। তার চিকিৎসা চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। জিম্বাবুয়ের ক্রীড়া মন্ত্রী তখন জানিয়েছিলেন, ‘জীবনের শেষ পর্যায়ে’ আছেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।

বুধবার সকালে হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের সাবেক স্পিনার রেমন্ড প্রাইস। ছবি: রেমন্ড প্রাইসের ফেইসবুক

জিম্বাবুয়ের এখনকার দলের অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস সেই সময় বলেছিলেন, স্ট্রিকের ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে আছে। বুধবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উইলিয়ামস নিজেও সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছিলেন। স্ট্রিকের পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠ তিনি।

স্ট্রিক বেঁচে আছেন জেনে এখন সামাজিক মাধ্যমে অনেক ক্রিকেটার জানাচ্ছেন স্বস্তির কথা।

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে স্ট্রিক সর্বকালের সেরাদের একজন। দেশটির ইতিহাসের সফলতম বোলার ও অলরাউন্ডার। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আছে তার আলাদা পরিচিতি। এদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। পরে ২০১৪ সালের মে থেকে দুই বছর বাংলাদেশের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার সময়ে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও শেষটা খুব ভালো হয়নি। 

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর যাদের হাত ধরে জিম্বাবুয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা তুলে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট, তাদেরই একজন স্ট্রিক। মূলত পেস বোলার হলেও ক্যারিয়ার এগিয়ে যাওয়ার পথে তিনি হয়ে ওঠেন দারুণ এক অলরাউন্ডার। 

প্রায় ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৬৫ টেস্টে তার উইকেট ২১৬টি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৮০টির বেশি উইকেট নেই আর কারও। ব্যাট হাতে ১ সেঞ্চুরি ও ১১টি ফিফটিতে রান করেন ১ হাজার ৯৯০। 

১৮৯ ওয়ানডে খেলে তার উইকেট ২৩৯টি। জিস্বাবুয়ের হয়ে দেড়শ উইকেটও নেই অন্য কোনো বোলারের। এই সংস্করণে ১৩ ফিফটিতে রান করেছেন ২ হাজার ৯৪৩। 

টেস্টে ১০০ উইকেট ও ১ হাজার রান এবং ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট ও ২ হাজার রানের ‘ডাবল’ অর্জন করা জিম্বাবুয়ের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। 

এছাড়াও জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি ৬৮ ওয়ানডে ও রেকর্ড ২১ টেস্টে। 

কোটা প্রথার কারণে যখন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট টালমাটাল, সেই কঠিন সময়টায় দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। পরে এই বোর্ডের সঙ্গে এই দ্বন্দ্বেই তিনি ছেড়ে দেন অধিনায়কত্ব। শেষ পর্যন্ত এই সমস্যার কারণেই ২০০৫ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে ইতি টানেন খেলোয়াড়ি জীবনের।

২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে তার নতুন পথচলা শুরু হয় বোলিং কোচ হিসেবে। পরে বাংলাদেশের দায়িত্ব শেষে আবার ফেরেন জিম্বাবুয়েতে। সেখানে বোলিং কোচ ও প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। দুই দফায় দায়িত্ব পালন করেন আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং কোচ হিসেবে। এছাড়াও বোলিং কোচ হিসেবে বাজ করেছেন নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।

মাঠের বাইরেও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে অনেক অবদান আছে স্ট্রিক ও তার পরিবারের। হারারের বাইরে থেকে আসা অনেক উঠতি ক্রিকেটারের ঠিকানা হতো এই পরিবার। এছাড়াও নানাভাবে তারা সহায়তা করেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে।

জীবনের শেষটার মতো ক্রিকেটে তার অধ্যায়ের শেষটাও খুব ভালো ছিল না। দুর্নীতি বিরোধী বিধির ৫টি ধারা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২১ সালে তাকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএল, বিপিএল ও আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগের নানা ভূমিকায় দায়িত্ব পালনের সময় এসবে জড়ান তিনি। এক জুয়াড়ির প্রস্তাব প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, দলের ভেতরের তথ্য দেওয়া ও আরও নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে তিনি মেনে নেন এসব অভিযোগ। তবে বরাবরই জোর দিয়ে বলেছেন, ম্যাচ পাতানোয় জড়িত ছিলেন না।

তার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২০২৯ সালের মার্চে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের - dainik shiksha দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন - dainik shiksha নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর - dainik shiksha জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক - dainik shiksha নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023221969604492