মৌলবাদের দাবানলের ওপর দাঁড়িয়ে এদেশে প্রগতির স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ। মৃত্যুর পরও তাই সমান সমাদৃত সব্যসাচী এই লেখক। সুস্থ সংস্কৃতির ধারক মহতী লেখকের ৭৬তম জন্মদিন আজ ২৮ এপ্রিল (শুক্রবার)।
মুক্তবুদ্ধি, যুক্তিতে প্রজ্ঞা আর জ্ঞান-অভিজ্ঞানে সংস্কৃতির সমীহ- সবমিলে ঋদ্ধ এক বাংলাকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। কুসংস্কার আর ঘুনেধরা সমাজের মোহাবিষ্ট মানুষের জন্য তিনি প্রথা ভেঙেছেন। প্রবহমান বাংলার মানুষ আর মানবতা তাঁর কাছে হয়ে উঠেছিলো আরাধ্য আর উদ্ভাসনের বিষয়। স্বপ্নের বাঙলা যাতে নষ্টদের অধিকারে না যায় তার জন্যই শত চেষ্টা করে গেছেন স্পষ্টভাষী হুমায়ূন। হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক, যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
মৌলবাদের কপাট খুলে দেয়ায় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করেছিল লেখককে। দেহ ও মনে ক্ষত নিয়ে পরে জার্মানীতে প্রয়াত হন কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক।
কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ এপ্রিল মাতামহের বাড়ি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অধীন বিক্রমপুরের কামারগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায়। তার জন্মনাম ছিলো হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তন করেন তিনি।
হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধ সংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুপরবর্তী সময়ে প্রকাশ হয়। তাকে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫)’ এবং ‘আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৯২)’ জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।
মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হামলার শিকার হন। প্রথমে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং পরে থাইল্যান্ডে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হন।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যু হয় তার। ১২ আগস্ট আবাসস্থলের নিজ কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় কিংবদন্তি এ লেখককে।