হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কার্তিকের চাঁদ ছিল হুমায়ূন আহমেদের ভীষণ প্রিয়। জ্যোৎস্নার অনাঘ্রাত সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায়ই তিনি চলে যেতেন তার নিজের হাতে গড়ে তোলা নুহাশপল্লীতে। বসতেন লিচুতলায়। সেখানে শ্যামল ছায়ায় আজও ঝরে পড়ে শিশিরকণা। আর লিচুতলায় চিরশায়িত হুমায়ূন আজও অবগাহন করেন কার্তিকের সেই মায়াবী জ্যোৎস্নাধারা।

কোটি পাঠকের প্রিয় ঔপন্যাসিক, বাংলা সাহিত্যের সেই বরপুত্রের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন সাহিত্যের বরপুত্র।\হশুভ জন্মদিন আমাদের আনন্দ-বেদনার কথাকার।

১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ সাল। শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে কার্তিকের হিমেল হাওয়ার রাতে জন্ম হলো এক শিশুর। ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। ডাকনাম যার 'কাজল'। আজকের এই দিনে জন্ম নেওয়া সেই শিশুই পরে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হয়ে ওঠেন কোটি পাঠকের প্রাণপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা কথাসাহিত্যের এই প্রিয়মুখ ক্ষণজন্মা কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জন্মদিন আজ।

মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে সৃষ্টিশীলতার অপার মাধুরীতে হুমায়ূন আহমেদ মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন বাংলা সাহিত্যের পাঠককে। মৃত্যুর পরও একইভাবে সম্মোহিত করে রেখেছেন তার জাদুকরি কথার নন্দনে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'র মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের পালাবদল সূচিত করেন। সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পগুলো অসাধারণ হয়ে ওঠে তার কলমে। একের পর এক উপন্যাসে তিনি নির্মাণ করেন বাংলাদেশের আধুনিক কথাসাহিত্যের নতুন জগৎ। যে জগৎ নিয়ে পেশা, বয়স নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরে পৌঁছে গেছেন দুই শতাধিক উপন্যাসের জনক হুমায়ূন আহমেদ। তিনি হয়ে উঠেছেন আনন্দ-বেদনার এক অকৃত্রিম কথাকার। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই কথাশিল্পী।\হহুমায়ূন আহমেদের বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। বাবার চাকরির সুবাদে হুমায়ূনের শৈশব কাটে সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা ও পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার কেমিস্ট্রি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮২ সালে।

এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পরের বছর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় হুমায়ূন আহমেদের কর্মজীবন। এক বছর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। লেখক হিসেবে সাহিত্য মহলে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে লেখালেখিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে ১৯৯০ সালে অধ্যাপনা পেশা থেকে অবসর নেন তিনি। এ সময় লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত হন প্রবলভাবে।

এক জীবনে হুমায়ূন আহমেদ গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা, সংগীত রচনাসহ নানা মাধ্যমে রেখেছেন তার অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর। ছবি এঁকেছেন। তার সৃষ্ট চরিত্র 'হিমু' ও 'মিসির আলী' পাঠক-পাঠিকার মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদ রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, দূরে কোথায়, সৌরভ, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, জোছনা ও জননীর গল্প ইত্যাদি। তার সর্বশেষ উপন্যাস 'দেয়াল' প্রকাশিত হয় মৃত্যুর দুই বছর আগে। হুমায়ূন আহমেদ নাটক রচনা ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখানেও রেখেছেন অতুলনীয় প্রতিভার স্বাক্ষর। কয়েক দশক ধরে নির্মাণ করেছেন বহু জনপ্রিয় একক ও ধারাবাহিক নাটক। পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্রও। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'ঘেটুপুত্র কমলা'র জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

বাংলাদেশের সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশনা শিল্পকে বাণিজ্যিক সফলতা দিতে ও এগিয়ে নিতে হুমায়ূন আহমেদের অবদান অপরিসীম। একক সক্ষমতায় বইয়ের বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রকাশনা শিল্পে তিনি সৃষ্টি করেন নতুন অর্থপ্রবাহের জোয়ার। হয়ে ওঠেন একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।


হুমায়ূন আহমেদ তার চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার এগুলোর অন্যতম। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশন তাকে নিয়ে 'হু ইজ হু ইন এশিয়া' শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে।

প্রতিবারের মতো হুমায়ূনের এবারের জন্মদিনটিতেও সারাদেশের অগণিত ভক্ত-পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীর মধ্যে প্রিয় কথাশিল্পীর জন্মদিনকে ঘিরে নানা রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কভিড-১৯ মহামারিবিঘ্নিত এ সময়ে জন্মদিন উদযাপনে অনেক পরিবর্তন এলেও লেখক ও পাঠকদের বিভিন্ন সংগঠন এ উপলক্ষে নানা অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।\হগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রয়াত লেখকের বাসায় পারিবারিক আবহে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের জন্মদিন উদযাপন। হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন জানান, আজ সকালে সপরিবারে নুহাশপল্লীতে গিয়ে লেখকের কবর জিয়ারত করবেন তারা।

দিনটি ঘিরে বিভিন্ন গণমাধ্যম নানা আয়োজন করছে। চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে প্রতিবছর এ দিনে আয়োজন হয় 'হিমু মেলা'র। তবে করোনার কারণে এবার হচ্ছে ভার্চুয়াল হিমু মেলা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032000541687012