হেনা দাস। বাংলার নারী জাগরণে যে কজন নারী তাদের সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। অবিভক্ত বাংলার নারী আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ হেনা দাস ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে এ বছর মহীয়সী এই নারীর জন্মশতবার্ষিকী।
ছাত্রজীবনেই স্বদেশি আন্দোলন এবং পরে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন হেনা দাস। পরবর্তী সময়ে তিনি নানকার বিদ্রোহ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া নারী ও শিক্ষা আন্দোলন, চা শ্রমিক, আদিবাসী ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ছিলেন হেনা দাস। বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া হেনা দাস ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু করে দীর্ঘ ১২ বছর বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুলাই ৮৫ বছর বয়সে ঢাকাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তিনি তার কর্মজীবনে ‘শিক্ষা ও শিক্ষকতা জীবন’, ‘উজ্জ্বল স্মৃতি’, ‘স্মৃতিময় দিনগুলো’, ‘নারী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা’, ‘স্মৃতিময় ’৭১’ এবং ‘চার পুরুষের কাহিনী’ নামে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। বিপ্লবী নারী নেত্রী হেনা দাস তার আন্দোলনমুখী কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে রোকেয়া পদকে সম্মানিত হয়েছেন।
এছাড়া সুনামগঞ্জ পৌরসভা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ঢাকেশ্বরী মন্দির, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, আহমেদ শরীফ ট্রাস্টসহ তিনি বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।
সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকীতে কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এসব কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং সাম্যবাদে বিশ্বাসী, আজীবন বিপ্লবী এই নারীর গৌরবময় কর্মমুখী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবমুক্তির আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এবং তার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার আহ্বান জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।