কিংবদন্তি বাঙালি সংগীত শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন তার মাতামহের বাড়ি পবিত্র বারাণসী শহরে। তার মাতামহ ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। তার পৈতৃক নিবাস ছিলো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। তার পরিবার কলকাতা শহরে আসে দ্বিতীয় শতকের প্রথমার্ধে। হেমন্ত সেখানে বড় হতে থকেন এবং প্রথমে নাসিরুদ্দিন স্কুল এবং পরবর্তীতে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের, যিনি পরবর্তীকলে বাংলার স্বনামধন্য কবি হয়েছিলেন। ওই সময়কালে বিশিষ্ট লেখক সন্তোষকুমার ঘোষ মহাশয়ের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ওই সময়ে হেমন্ত ছোটো গল্প লিখতেন, সন্তোষ কুমার কবিতা লিখতেন এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় গান গাইতেন।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করে হেমন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। তার সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্যে লেখেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন।
হেমন্ত ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সলিল চৌধুরির কথায় ও সুরে চলচ্চিত্রের বাইরে একটা গান গাঁয়ের বধূ রেকর্ড করেন। দু-পিঠের ৭৮ আরপিএম ছ-মিনিটের ওই ডিস্ক রেকর্ডে বাংলার ভিন্ন গতির এক আবেগমথিত প্রচলিত কাঠামোকে নিবদ্ধ করেছিলো। এই গান এক উন্নত এবং মমতাময়ী গ্রাম্য নারীর জীবন ও পরিবারকে সরল শান্ত মনোরম করে ফুটিয়ে তুলেছিলো এবং বর্ণিত হয়েছিলো কীভাবে দুর্ভিক্ষের দৈত্য ও আসন্ন দারিদ্র্যের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিলো। এই গান হেমন্ত এবং সলিলকে পূর্ব ভারতে এক অভাবনীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলো, এককথায়, হেমন্তকে তার সমসাময়িক পুরুষ গায়কদের থেকে এগিয়ে রেখেছিলো। পরবর্তী কয়েক বছরে হেমন্ত এবং সলিল জুটি সমাজকে অনেক গান উপহার দিয়েছিলেন। প্রায় এই সমস্ত গানেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ ছিলো।
আধুনিক গান ছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি.লিট। নানামুখী গানে আর কোনো শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সমকক্ষ হতে পারেনি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় সংগীতের ঈশ্বর। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন।