জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কবি বইটি উৎসর্গ করেছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে। তবে সে সময়ে যদি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই কাব্যগ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর নামেই হয়তো উৎসর্গ করতেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বলেন, নজরুল আমাদের সাহিত্যে যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন সেজন্য তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণার শতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। নজরুল প্রথম কাব্যগ্রন্থ তাকে সারা পৃথিবীতে মানবতা ও সাম্যের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি কাব্যগ্রন্থটি তৎকালীন এই বাংলার বিপ্লবী কবি বারেন্দ্র কুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেছেন। তার জীবনের উৎকৃষ্ট সময়ে ১২ টি কবিতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।
ঢাবি উপাচার্য আরো বলেন, আমার ধারণা, যদি ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন এবং তার বয়স ও যদি ওরকম হতো তাহলে কাজী নজরুল কাব্যগ্রন্থটি তাকেই উৎসর্গ করতেন। কেননা এই জাতি রাষ্ট্র সৃষ্টি গঠনে বঙ্গবন্ধু যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন নজরুল সেই বিবেচনায় তার মধ্যেই কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ করার যে গুণাবলি তা খুজে পেতেন। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা নিয়ে জাতির সংকটে, যে কোনো বিপদে বঙ্গবন্ধু নজরুলের সে কবিতাবলি প্রকাশ করতেন। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সাম্যের ও মানবতাবোধের যে মিল তা দুইজনকেই বাংলা সাহিত্যে অমর করে রাখবে। পাশাপাশি বাংলাভাষী মানুষ তাদেরকে জীবনভর স্মরণ করবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন। শ্রদ্ধার ফুলে ছেঁয়ে গেছে জাতীয় কবির সমাধিস্থল।
সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। এদিকে সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন ঢাবি উপাচার্য।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। এসময় তিনি বলেন, কবি নজরুল প্রেমের, বিদ্রোহ, বেদনার কবি। সাহিত্যের সব শাখাতেই তার বিচরণ। তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। এই চেতনায় আমরা উজ্জীবিত হতে চাই। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেটাই হবে নজরুলের চেতনার প্রতীক।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, নজরুল জীবদ্দশায় দেশের জন্যে, এই দেশের মানুষের জন্যে যেখানে অন্যায়, অত্যচার হয়েছে সেখানে বিদ্রোহ করেছেন, তার লেখনীতে তা ফুটে উঠেছে। বাংলা সাহিত্য তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফাতেমা কাওসারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দেন। সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দেবপ্রসাদ দাঁর নেতৃত্বে বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।