১২০ টাকায় সংসার চলবে কী করে?

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |

দৈনিক মজুরি ৩শ’ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের  ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা এই ধর্মঘট পালন করছেন। গতকাল সকাল থেকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, জুড়ীসহ ৭টি উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ফ্যাক্টরি এলাকায় তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান নেন।

দুপুরে বিভিন্ন বাগান থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনায় জড়ো হন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল পালন করেন। সমাবেশে চা শ্রমিকরা বলেন- সাপ্তাহিক ছুটি রোববার ও শোক দিবসের ছুটি আগামী ২দিন। ওই ২দিনের মধ্যে ৩শ’ টাকা মজুরি দাবি না মানলে মঙ্গলবার থেকে আবার অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করবেন তারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পঙ্কজ পন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা সহ বিভিন্ন ভ্যালী থেকে আসা চা শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চা-শ্রমিকরা  দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন।

প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক সময়ে বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।  চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা একাধিকবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন।

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির এ দাবি দীর্ঘদিনের। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।  বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।  টেংরা ইউনিয়নে অবস্থিত চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেংরা বাজারে মানববন্ধন শুরু করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিজেদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিয়ে কয়েক ঘণ্টা কুলাউড়া- মৌলভীবাজার সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে দুই প্রান্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে যানজট দেখা দেয়। 

একই দাবিতে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের করিমপুর, ইটা ও উদনা চা-বাগানের শ্রমিকরা মুন্সীবাজারে মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে মানববন্ধন করে। উত্তরভাগ ইউনিয়নের ইন্দানগর, উত্তরভাগ চা-বাগান সহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা একই সড়কে মানববন্ধন ও অবরোধ করে রাখে। এ সময় তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।  এদিকে চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অবিলম্বে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মজুরি বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনয়িন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি। গতকাল বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল মোহাইমীন ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যুক্তবিবৃতিতে দেশের সবচেয়ে নিষ্পেষিত ও অবহেলিত শ্রমিক হিসেবে চা-শ্রমিকদের আখ্যায়িত করে বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্র্ধ্বগতির বাজারে একজন চা-শ্রমিক সর্বোচ্চ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। এই মজুরি দিয়ে বর্তমান বাজারে ১ লিটার তেলও পাওয়া যায় না। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হয়নি। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে চা-উৎপাদনে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে উঠে এসেছে।

এমনকি করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা-শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদনের ফলে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে দৈনিক তিনবেলা অতি সাধারণভাবে আহারের জন্য ১৫০(৩০+৬০+৬০) টাকায়  যেখানে পেট ভরে না, সেখানে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দাবিই করেছে মাত্র ৩শ টাকা। অথচ প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা) পেয়েও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন বলেও জানান তারা।  স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন, টানা চারদিন দুইঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের পরও দাবি আদায় না হওয়ায় শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। সকালে দেউন্ডি, চান্দপুর, চণ্ডী ও লস্করপুর চা বাগানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। 

ন্যায্য মুজুরির দাবিতে দেশের সকল চা বাগানে কর্মবিরতি, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করছেন চা শ্রমিকরা। এরই অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানে লাগাতার ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা।  হবিগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগানে বিক্ষোভ-সমাবশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন রায়, দেউন্ডি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি প্রবীর বুনার্জী, সাধারণ সম্পাদক আপন বাগতি। সকাল থেকে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ  রেখে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন। পরে মিছিল নিয়ে চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036890506744385