১৩ চ্যালেঞ্জ শিক্ষাখাতের, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শিক্ষা খাতে ১৩টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ না করা, প্রাথমিকে ঝরে পড়া, মাধ্যমিক শিক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষার্থী ভর্তি, মানসম্মত শিক্ষকের সংকট, ভর্তির ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের ব্যবধান এবং চাকরির বাজারে সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মাদরাসা শিক্ষার মান। অনিয়ন্ত্রিত কওমি মাদরাসার কথাও বলা হয়েছে।  

এসব বিষয় চিহ্নিত করে প্রথমবারের মতো অ্যাকশন প্ল্যানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। শিক্ষা খাতের অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো-উচ্চ শিক্ষায় সরকারি কলেজে একই শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষক সংকট। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা পরিচালনার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক নয়।

আরও আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো একক নীতিমালা না থাকা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা নিজেদের মালিক মনে করেন এবং গবেষণার জন্য মানসম্মত ফ্যাকাল্টি না থাকা। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রচলিত ধ্যান-ধারণা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে অনেকটাই ভিন্ন এবং কারিগরি শিক্ষায় নারীদের কম অংশগ্রহণ ও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা তৈরির অভাব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয় স্তরের শিক্ষা সুযোগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় সর্বজনীন প্রবেশাধিকারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে মোট অন্তর্ভুক্তি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ১০৯ দশমিক ১৪ শতাংশ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ১১০ দশমিক ৪৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এভাবে শিক্ষার সব স্তরেই উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু গুণগত মান অর্জন শিক্ষার অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা সেক্টর প্ল্যান তৈরি ও বাস্তবায়ন করে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশেও অ্যাকশন প্ল্যান করা হচ্ছে হচ্ছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে পরিচালক ও উন্নয়ন মিলে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৮৯ হাজার ১২ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের তৈরি খসড়া কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো অবকাঠামো নেই। ফলে বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই ২-৩টি কক্ষ এই কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে বাড়ি থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে চান না। এজন্য শিশুদের বাসস্থানের কাছেই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন জরুরি। এই শিক্ষার জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দরকার। আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগ হলেও ঝরে পড়ার হার এখনো প্রায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ৩৩ শতাংশের বেশি শিশু সঠিকভাবে একটি গল্পের সব শব্দ পড়তে পারেনি। অর্ধেকের বেশি শিশু মৌলিক গঠন দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে সংখ্যাগত জ্ঞানে ৫০ শতাংশের বেশি শিশু সফলভাবে সংখ্যা গঠন ও সংখ্যার পার্থক্য করতে পারেনি।

খসড়ায় মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো কম ভর্তি হওয়া। বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির এ ধারা উদ্বেগজনক। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর থাকা দরকার। মানসম্মত শিক্ষক বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষকের প্রকট সংকট রয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনায় অভিভাবকরা সম্পৃক্ত হন না, যা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অন্তরায়। মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষার মান চাকরির বাজারে সঙ্গে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক নয়। সাধারণ শিক্ষার্থী ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শিখন ও ফলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই ধারার পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের স্কোর কম। 
এছাড়া অন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কওমিমাদরাসা শিক্ষা। যেগুলো সরকারি কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে চলে। 

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অ্যাফিলিয়েটে কলেজগুলোর জন্য রয়েছে আলাদা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া পাবলিক বিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ আছে। পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা তথা দক্ষতা উন্নয়ন ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যেভাবে হবে বার্ষিক পরীক্ষা - dainik shiksha মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যেভাবে হবে বার্ষিক পরীক্ষা নির্যাতনে তোফাজ্জলের শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে - dainik shiksha নির্যাতনে তোফাজ্জলের শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে ১৩ চ্যালেঞ্জ শিক্ষাখাতের, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হচ্ছে - dainik shiksha ১৩ চ্যালেঞ্জ শিক্ষাখাতের, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হচ্ছে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১ হাজার ৮৮৭ শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১ হাজার ৮৮৭ শিক্ষক উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ১ হাজার ২৭০ শিক্ষক - dainik shiksha উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ১ হাজার ২৭০ শিক্ষক জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় সমন্বয়কসহ ৮ শিক্ষার্থীর নামে মামলা - dainik shiksha জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় সমন্বয়কসহ ৮ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো - dainik shiksha দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059878826141357