১৩ বছর স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন তুলেছেন শিক্ষক

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মাগুরা |

মাগুরায় ১৩ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও ঠিকই বেতন তুলেছেন এক শিক্ষক। মাগুরা–২ আসনের সাবেক এমপি বীরেন শিকদারের এপিএস ছিলেন তিনি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেতন-ভাতা তুললেও ক্লাসে তাকে পায়নি শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি পলাতক।

স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলা শিক্ষকের নাম শিশির সরকার। তিনি মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়ার বরইচরায় অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। স্কুলে পাঠদানের বদলে পুরো সময়জুড়ে তিনি ছিলেন সাবেক এমপি ও পরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেন শিকদারের এপিএস। 

শিক্ষক হিসেবে তাকে ক্লাসে দেখেননি বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। তবে তুলে নিয়েছেন বেতন ভাতা।   

অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিসা বিশ্বাস বলেছে, ‘ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত পড়ে আসছি। কিন্তু শিশির স্যারকে কোনো দিন ক্লাস নিতে দেখিনি।’

প্রতিমন্ত্রীর এপিএস শিশিরের দাপটে অসহায় ছিল স্থানীয় প্রশাসন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরাও মুখ খোলেননি ভয়ে। তাই চাকরি না করেও সমস্যা হয়নি বেতন ভাতা তুলতে।

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হানিফ বলেছে, ‘গত পাঁচ বছর আমি এই স্কুলে ক্লাস করেছি, তাঁকে মনে হয় একবার দেখেছি। তাও সাংবাদিক আসার কারণে তিনি এসেছিলেন।’

শিশির সরকার মাঝেমধ্যে স্কুলে এসে সই করে যেতেন হাজিরা খাতায়। সাথে করে নিয়ে আসতেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নারায়ণ বরকে।

এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার বলেন, ‘শিশির সরকার নামে আমার স্কুলে যে টিচার ছিলেন, তিনি তিনি মাঝেমাঝে স্কুলে আসতেন। যেদিন আসতেন সেদিন সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন। সভাপতির সাহায্যে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন। আর ছেলে-মেয়েরা তাঁকে চিনত না। কারণ তিনি ক্লাস নিতেন না। আমি এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বলেছি।’

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেয়া শিশির সরকার দেশে ও ভারতে  বহু সম্পদ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

স্কুলের প্রধান শিক্ষিক আরও বলেন, এমপিও শিটে দেখা যায়, আগস্ট মাসের বেতন ভাতা চলে এসেছে। স্কুলে না যেয়েই তিনি প্রতি মাসের বেতন এভাবে উঠিয়ে নেন। আর এর সাথে পুরোপুরি জড়িত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রমজান আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করলেও এমপি বীরেন শিকদারের এপিএস শিশির সরকার কখনো বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন বলে ছেলে-মেয়ের মুখে শোনা যায় না। তিনি বেতন তুলে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো দিন ক্লাস নিতে আসেননি। তিনি অনেককে নির্যাতন করেছেন। এলাকাভিত্তিক অনেক পাওয়ার খাটিয়েছেন বীরেন শিকদারের এপিএস থাকা অবস্থায়।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শিশির সরকার তার নিযুক্ত করণিক সুজয় রায়ের মাধ্যমে দুই মাসের ছুটিও অনুমোদনের রেজুলেশন সই করিয়ে নেন।  তবে এতে প্রধান শিক্ষকদের দায় দেখছে জেলা শিক্ষা অফিসার।

মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবীর বলেন, ‘শিশির সরকার ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কর্মরত আছেন বলে জানি। তবে তিনি বিদ্যালয়ে না এসে হাজিরা খাতায় কীভাবে স্বাক্ষর করেছেন সেটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন। তার ছুটির বিষয়ে আমি কোনো কাগজ পাইনি।’

অভিযুক্ত শিশির সরকার ও নারায়ণ বরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেও তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি - dainik shiksha তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি - dainik shiksha স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি - dainik shiksha শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল - dainik shiksha এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর - dainik shiksha ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031177997589111