১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ ৩৪ কোটি টাকা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণার জন্য সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। শুধু বুয়েটই নয়, এ চিত্র দেশের অন্যান্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন অনুযায়ী, এগুলো প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা। 

দেশকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে নিতে গত কয়েক দশকে পাঁচটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। চলতি মাসে প্রকাশিত ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, অন্তত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন পাঁচ প্রকৌশল এবং আট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণা খাতে মোট বরাদ্দ ‍ছিল ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। এগুলোর মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সবগুলোয় গবেষণা খাতে বরাদ্দ ৫ কোটি টাকারও কম। এর মধ্যে ১০টিরই বরাদ্দ ৩ কোটি টাকারও কম।

বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হিসেবে গবেষণার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এমনকি অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা খাতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক বরাদ্দও দেয়া হচ্ছে না। 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‌আমরা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণা খাতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকারও কম।’

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) গত অর্থবছরে বরাদ্দ পেয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।  বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘‌গবেষণায় ভালো করতে হলে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আমাদের বর্তমানে গবেষণায় যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা আগের তুলনায় ভালো। কিন্তু এ বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকার যেহেতু এখন গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছে, আমরা আশা করব ভবিষ্যতে বরাদ্দ আরো বাড়বে।’

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব মনে করেন অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় খুবই অপ্রতুল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ১ কোটি টাকা। আমরা যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে অবশ্যই প্রতিটি বিভাগে গবেষণার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু মাত্র ১ কোটি টাকায় ৩৩টি বিভাগে গবেষণার সুযোগ তৈরি কীভাবে সম্ভব? আমাদের পরিকল্পনা ছিল দেশের আর্থসামাজিক চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করব। কিন্তু যা বরাদ্দ দেয়া হয়, তাতে একেকটি গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া যায়। কিন্তু এত কম টাকায় ভালো গবেষণা সম্ভব না। ফলে ভালো আউটপুটও আসে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তুলনামূলক বেশি বরাদ্দ পেয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি বরাদ্দ পেয়েছে ৮ কোটি ২ লাখ টাকা।  

গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া উচিত বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। চাইলেই আমাদের বাজেট খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব না। এর পরও গত কয়েক বছরে সরকার গবেষণা খাতে বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে কিনা, সেটিও দেখার বিষয়। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সক্ষমতা ও মান বিবেচনা করে বরাদ্দ দেয়া উচিত। বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে এ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই দেশ গবেষণায় এগিয়ে যাবে।’

একই মত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনেরও। গত অর্থবছরে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই অপ্রতুল বরাদ্দ পেয়েছে, যার পরিমাণ ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। 

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ কোটি ২২ লাখ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ কোটি ৩৭ লাখ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ কোটি ৬২ লাখ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ কোটি ৭২ লাখ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ কোটি ৩২ লাখ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ কোটি ৫২ লাখ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে দেশের জিডিপির অন্তত ৫-৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‌শুধু প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নয়, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রধান কাজ শিক্ষা ও গবেষণা। কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই এ গবেষণায় পিছিয়ে। এর একটি কারণ হলো বরাদ্দের অপ্রতুলতা। বর্তমানে দেশে জিডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২ থেকে আড়াই শতাংশ। এটি অন্তত ৫-৬ শতাংশ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা গবেষণায় আলাদা বরাদ্দ থাকা উচিত। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো আমাদের শিক্ষকদের একাংশ গবেষণাবিমুখ। এ কারণেও গবেষণায় আমরা পিছিয়ে। এটিও দূর করতে হবে এবং শিক্ষকরা যাতে গবেষণায় আগ্রহী হন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটসংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগ। এ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষণা খাতে যে বরাদ্দ সেটি পর্যাপ্ত নয়, এটি সঠিক। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে এ বাজেট বৃদ্ধি করছি। যেমন ২০২০ সালে গবেষণা খাতে যে বরাদ্দ ছিল, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সে তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সামনে এ বরাদ্দ আরো বাড়বে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‌শুধু গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধিই নয়, আমরা গবেষণার মান বৃদ্ধিতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা গবেষণা বাবদ অর্থ বরাদ্দ পাবেন, তাদের মানসম্মত জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে গবেষণা নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে এবং যারা এসব শর্ত সঠিকভাবে পালন করছেন, ভালো পারফরম্যান্স করছেন, তাদের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024020671844482