১৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, সাবেক ওসির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পিরোজপুর প্রতিনিধি |

১৮ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ। 

মামলার আসামিরা হলেন মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ওসি ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া তালুকপাড়া গ্রামের সৈয়দ আবদুল্লাহ (৫৬), তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার (৪৫) এবং শাশুড়ি কারিমা খাতুন (৬২)। সৈয়দ আবদুল্লাহ বর্তমানে ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত।

মামলার নথির বরাত দিয়ে দুদক পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ গোলাম মাওলা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সৈয়দ আবদুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেন। এগুলো ব্যবহার করে তিনি এক কোটি টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র কেনেন। এছাড়া সৈয়দ আবদুল্লাহর শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে রাজধানীর গুলশানের ‘নাভানা এসিলমন প্যালেসের’ ১২ তলায় একটি ৩ হাজার ৯০৯ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটটি ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। সৈয়দ আবদুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে রাজধানীর কাকরাইলে বাণিজ্যিক ভবন গ্রিন সিটি রিজেন্সির তৃতীয় তলায় ২ হাজার ১২০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস, ২৬৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিংসহ মোট ২ হাজার ৩৮৬ বর্গফুট জায়গা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া ফারহানা আক্তারের নামে রাজধানীর বড় মগবাজারে নির্মিত ‘দ্য ওয়েসিস কমপ্লেক্স টাওয়ারের’ ১০ম তলায় ২ হাজার ১৫০ বর্গফুটের রয়েল টাইপের ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার অ্যাপার্টমেন্ট, খিলগাঁও পুলিশ প্রজেক্ট সাউদার্ন পার্ক-১, ব্লক-এম পশ্চিম নন্দীপাড়ায় ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, সৈয়দ আবদুল্লাহর নিজের নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে ছয় কাঠা করে দুটি প্লট রয়েছে। এই দুটি প্লটের জন্য সৈয়দ আবদুল্লাহ এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। ফারহানা আক্তারের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা পরিশোধ করে তার মা কারিমা খাতুনের নামে আবাসিক ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে আসামিরা অবৈধভাবে ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ২৮৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সৈয়দ আবদুল্লাহ সরকারি কর্মচারী হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত থাকাঅবস্থায় তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে অর্জিত টাকায় নিজের নামে, স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে সম্পদ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবদুল্লাহ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে উপপরিদর্শক হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মঠবাড়িয়া থানার ওসি হিসেবে কমর্রত ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ ওই সময় (২০২০ খ্রিষ্টাব্দে) অনুসন্ধানের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বরিশালে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানে সৈয়দ আবদুল্লাহ ও তার স্ত্রী-শাশুড়ির নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য উঠে আসে।

সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অনুসন্ধানে সৈয়দ আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে ১৮ কোটি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত ২৮ মে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের আদেশে সৈয়দ আবদুল্লাহর অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সৈয়দ আবদুল্লাহ ও তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের ট্যাক্স ফাইল জব্দ করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029070377349854