শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিন উপস্থিত থাকে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী। তবে হাজিরাখাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় শতাধিক। এই শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১৩ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী। আবার সকাল থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলেও বন্ধ হয়ে যায় সময় শেষ হওয়ার আগেই। এ অবস্থা জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগারগড় বজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীসহ নানা সংকট নিয়ে চলছে পাঠদান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত খাতাকলমে ১৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে নিয়মিত উপস্থিত থাকে ১৫-২০ জন। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ঠিক উল্টো চিত্র। বেশি দেখানোর জন্য অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী এনে ভর্তি দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
গত রোববার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত উপস্থিত মাত্র ১৯ জন। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে কাগজকলমে ভর্তি ৪০ জনের মধ্যে উপস্থিত ৮ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৪৪ জনের মধ্যে ২ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৪৬ জনের মধ্যে ২ জন ও দশম শ্রেণির ২১ জনের মধ্যে ৭ জন উপস্থিত রয়েছে। এ ছাড়া নবম শ্রেণিতে ৪১ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সেদিন কেউ উপস্থিত ছিল না।
স্থানীয় ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়ে মামলা চলছে। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম নিজের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে নিয়ে গোপনে কমিটি করেছেন। ফলে কমিটিরও কোনো তদারকি না থাকায় দিন দিন শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
হাবিবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হচ্ছে না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল বাতেনের অভিযোগ, শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। কয়েক বছর ধরেই এমন অবস্থা চলছে। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসে না। খোঁজ নিয়ে দেখেন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’