২৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৫ শিক্ষক, তবু হয় না ক্লাস

রাঙামাটি প্রতিনিধি |

রাঙামাটির সদর উপজেলার ৬নং বালুখালী ইউনিয়নের সাপমারা পাহাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনেকটা ইচ্ছামতো চলে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বিদ্যালয়ে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও হয় না নিয়মিত ক্লাস। ফলে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে প্রতিষ্ঠানটি। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেবের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি বন্ধ ও সব শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলানো। বিদ্যালয়ের দেয়ালের সময়সূচিতে শনি-বুধ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ও বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যালয় খোলা রাখার লেখা থাকলেও বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি। 

এলাকার স্থানীয় অভিভাবক মোহাম্মদ রুস্তম বলেন, আমরা দেখি একটা প্রাইমারি স্কুল সচরাচর ১০ থেকে ৪টা পর্যন্ত চলে। কিন্তু এই স্কুলে কোনো নির্দিষ্ট সময় নাই। মাস্টার দু-তিনজন মাঝে মাঝে যখন ইচ্ছা আসে আর মন চাইলে চলে যায়। কোনো সময় পতাকা উত্তোলন হয় কোনো সময় হয় না। প্রধান শিক্ষক মাসের বেশিরভাগ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। এ ছাড়া বিদ্যালয় সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনো কাজ করেন না। 

এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন হয়রানির মামলা দেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে স্কুলের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির মামলা দিয়ে ১৩ দিন জেল খাটিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেব ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক রমজান খাতুন তারা দুজনে একই স্কুলে চাকরি করেন। কিন্তু তারা ঠিকমতো স্কুল করেন না। তারা শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান। স্কুলের পড়ালেখার মান অত্যন্ত খারাপ।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনির হোসেন বলেন, আমরা চাই স্কুলটি সুন্দরভাবে চলুক। আমাদের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো পড়ালেখা করুক। এই মাস্টারদের অন্যত্র বদলি করে নতুন কিছু মাস্টার নিয়োগ দেওয়া হোক। স্কুলে কোনোভাবে পড়ালেখা করায় না। মাস্টাররা স্কুলে আসে ১১টার দিকে চলে যায় ১২টা /১টার দিকে। গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর জন্য এত জন শিক্ষক থাকার পরেও স্কুলের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কামাল হোসেন বলেন, স্কুলটি একসময় ভালো ছিল। কিন্তু বছর দুয়েক থেকে খুবই খারাপ চলছে। আমি স্কুলে কয়েকবার গিয়ে দেখেছি হেড মাস্টার টেবিলের ওপর ঘুমাচ্ছেন। 

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লোকমান হোসেন বলেন, কিছু বলতে গেলে তো প্রধান শিক্ষক লোকজনদের মারতে আসেন। তাই ভয়ে কেউ সহজে মুখ খুলতে চায় না। তবে এলাকার লোকজন ও অভিভাবকরা অনেকেই প্রধান শিক্ষকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিলে ভালো হবে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেবের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে তিনি আর কোনো যোগাযোগ করেন নাই।

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমিও অবগত আছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048389434814453