৩০ বছরেও চালু হয়নি শিক্ষকদের বদলি

মো. আবু তাহের মিয়া |

কথায় আছে অভাগা যেদিকে যায় সাগরও শুকিয়ে যায়। কথাটি যেনো বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য। বলা হয়ে থাকে  মহান পেশা শিক্ষকতা। কিন্তু পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দূর্ভাগ্য যেনো বেসরকারি শিক্ষকদের পিছু ছাড়ছে না। বেসরকারি শিক্ষকেরা মহান পেশায় নয়, মহাপাপ করে বসে আছেন! ভাগ্যদেবীও শিক্ষকদের সঙ্গে যেনো নাই। শিক্ষকদের নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করতে কাউকে দেখি না। সেটা আর্থিক হোক বা অনার্থিক। শিক্ষকদের বেতন ভালো নেই। নামে মাত্র উৎসব ভাতা। এক হাজার টাকা ঘর ভাড়া। ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। শিক্ষাভাতা নেই, বদলি নেই। শুধু নেই আর আর নেই। আশার আলো দেখছিলেন শিক্ষকেরা অন্তত বদলি হতে পারবে। বদলি হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন। বদলি অনার্থিক বিষয় ছিলো। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেলো। তীরে এসে স্থগিত হলো বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া।

গত ৫ মে আরেকটি কালো অধ্যায় রচিত হলো। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য। অথচ দিনটি শিক্ষকদের আনন্দ-উল্লাসের দিন হওয়ার কথা ছিলো। সেখানে দিনটি বিষাদে-বেদনায় পরিণত হলো। শুধু কি বেদনা। যাকে বলে বেদনার বিষে একেবারে নীল হতে হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য কর্মশালার পর কর্মশালা হলো। চূড়ান্ত সিদ্বান্ত খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন হবে ঠিক শেষ মুহূর্তে বাধাপ্রাপ্ত হলো। তারা বললেন বদলি জটিল প্রক্রিয়া। তাহলে এতো দিন কর্মশালায় এই জটিলতা ধরা পড়লো না কেনো! এই জটিলতার কথা কর্মকর্তারা বলেননি কেনো? বেসরকারি শিক্ষকেরা আবার তামাশার পাত্র হলেন রাষ্ট্রীয়ভাবে। আমরা শিক্ষকেরা এও বলছি যদি আপনারা বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি জটিল মনে করেন। তাহলে সকল ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি দেন। আবার এনটিআরসিএ নিয়োগে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদন বন্ধ করলেন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বদলি হোক সর্বজনীন সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে। কেউ বদলির সুযোগ পাবে, কেউ পাবে না এমন নীতিমালা যেনো না হয়। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি চালু মৃত প্রাণে জীবন দান। এ বদলি হোক সব শিক্ষকদের জন্য। শিক্ষকেরা যেনো আর কোনো হতাশায় না ভোগেন। নতুন করে যেনো কোনো বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়। ইতোমধ্যে মাদরাসা অধিদপ্তর সব ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ নিয়েছে যা প্রসংশনীয়। এ খসড়ায় কোনো বৈষম্য রাখা হয়নি সবার জন্য সমান সুযোগ রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যেনো সব ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের জন্য সমান সুযোগ রাখা হয়।

এনটিআরসিএ জন্মের পূর্বে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালায় শিক্ষকদের বদলি চালুর কথা বলা হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে সব নীতিমালা ও হাইকোর্টের নির্দেশেও বেসরকারি সব শিক্ষকদের বদলির কথা বলা হয়েছে, যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও সব শিক্ষকদের বদলি চালু না করে এনটিআরসিএ শিক্ষকদের বদলি প্রাধান্য কেনো! এনটিআরসিএ সুপারিশ করলেও ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হয়েছে। তা হলে কী দাঁড়ালো সব শেষে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হতে হয়েছে। এখানে কমিটি, সনদপ্রাপ্ত এবং এনটিআরসিএ সুপারিশ প্রাপ্ত না দেখে সব ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি চালু হোক।

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এ একীভূত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। একীভূত শিক্ষা হচ্ছে একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরিব, ছেলে-মেয়ে, প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধীসহ সব শিশুকে একই শিক্ষক দ্বারা, একই পরিবেশে এক সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষাদান করা হয়। আমরা শিক্ষকেরা শিখন অর্জন করছি দৃষ্টভঙ্গি ও মূল্যবোধ। কিন্তু শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বিভাজন কেনো? শিক্ষকরা একে অপরের সহযোগিতায় কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু প্রতিযোগিতা কেনো? এখানে সব শিক্ষকের পরিচয় শিক্ষক। কে কীভাবে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন সেটা বড় নয়। এখানে সবার পরিচয় ইনডেক্সধারী শিক্ষক। সবাই সমান সুযোগ পাবেন।

বদলি এমন একটি প্রক্রিয়া যা চালু করলে সরকারের কোনো টাকা খরচ হবে না। সব শিক্ষকদের বদলি জটিল মনে হলে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি হতে পার সমাধান। আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির ফলে সরকারের কোষাগারে কিছু টাকাও জমা হতে পারে। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। স্মার্ট ও ডিজিটাল বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। সব তথ্য এখন হাতের মুঠোয়। তাই বলবো সব শিক্ষকদের বদলি চালুর জন্য আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাই যথেষ্ট।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে সুযোগ সুবিধায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বেতনে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য। বাড়ি ভাড়ায় পার্থক্য। ঈদ বোনাসে পার্থক্য। বদলির ক্ষেত্রে পার্থক্য। শুধু পার্থক্য আর পার্থক্য। এখন আবার বদলি নীতিমালায় যদি বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয় তাহলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জটিল থেকে জটিলতর বৈষম্য তৈরি হবে। যা শিক্ষায় স্পষ্ট প্রভাব পড়বে বলে মনে হয়। শিক্ষায় সমাধান হোক সর্বজনীন বদলি চালু।

শিক্ষায় বৈষম্য কাম্য নয়। যা কিনা রাষ্ট্রে সমাজে প্রভাব ফেলে। শিক্ষায় সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের কাজ চলছে। সেখানে শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা বৈষম্য নিরসন করে সব শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা হবে। এমনটাই প্রত্যাশা করি। একটা গোষ্ঠি কে সন্তুষ্ট নয়, সব শিক্ষকদের সন্তুষ্ট করে যেনো নীতিমালা হয়। বদলি চালু সব শিক্ষকদের অধিকার।

লেখক: সহকারী শিক্ষক তাড়ল উচ্চ বিদ্যালয়, দিরাই, সুনামগঞ্জ

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074219703674316