৩৪ দিন স্কুলে গিয়ে তিন বছরের বেতন তুলেছেন প্রধান শিক্ষক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |

পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ে গিয়েছেন মাত্র ৩৪ দিন। শিক্ষাছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটি দেখিয়ে বেতন তুলেছেন পুরো তিন বছর। তার কারণে বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পলায়নের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হলেও চাকরি ফিরে পেতে এখন আদাজল খেয়ে নেমেছেন তিনি। এই অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন তালা উপজেলার সেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন। তিনি তালা উপজেলার দাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ সানার মেয়ে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাজমা খাতুন ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বর সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মাত্র ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন তিনি। এরপর শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য দেড় বছরের ছুটি নিয়ে এক বছর মেয়াদে খুলনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নিয়মানুযায়ী বাকি ছয়মাস বিদ্যালয়ে সংযুক্ত থাকার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ে আসেননি নাজমা খাতুন। পরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। ওই ছুটি শেষ হওয়ার পর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি নেন ২ মাসের অসুস্থতাজনিত ছুটি। সে ছুটি শেষ হলেও তিনি বিদ্যালয়ে ফেরেননি।

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলায় বিগত ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চাকরি ও পলায়নের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার (১৮) আলোকে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিপরীতে পত্রপ্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
 
শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল সূত্রে আরও জানা গেছে, ভুয়া অসুস্থতাজনিত সনদ দেখিয়ে ৯ মাসের ছুটি বৈধ করার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে নাজমা খাতুন প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পদ রয়েছে চারটি। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ছিলো ৩ শতাধিক। প্রধান শিক্ষক না আসায় লেখাপড়ার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় এখন শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩০ জনের মতো। 

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মফিজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটে পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে একজন ডেপুটেশনে শিক্ষক চেয়েছিলাম। এ বিষয়ে অনেকবার শিক্ষা অফিসে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তালা উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার ধমক খেতে হয়েছে।


 
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাল শ্যামল কুমার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টির অচলাবস্থা চলছে। নাজমা খাতুনকে আমরা বিদ্যালয়ে মাত্র ৩৪ দিন পেয়েছি। এরপরে বিদ্যালয়ের সঙ্গে তার আর সংযোগ নেই। তার কারণে বিদ্যালয়টির আজকে এই করুণ অবস্থা। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, করোনার পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভাগীয় মামলা চলছে। 

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চাকরি ফিরে পেতে অভিযোগের জবাব দিয়েছি। তিন বছরের মধ্যে বিধি অনুযায়ী ২ বছর ৩ মাস বেতন তুলেছেন। বাকি ৯ মাসের বেতন এলো কিভাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাজমা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ প্রশ্নের জবাব আমি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। 

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা) মোসলেম উদ্দীন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নাজমা খাতুনের জবাবপত্র পেয়েছি। আইন সবার জন্য সমান। আগামী ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হবে। শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034151077270508