৩৫৪ সরকারি হাই স্কুলের সাতশ পদই শূন্য

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সমপর্যায়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এডিইও) প্রায় সাতশ’ পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদ পূরণের ‘করণীয়’ জানা নেই শিক্ষা প্রশাসনের। এ জন্য কর্মশালা বা সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও মাউশি ভিন্ন কথা বলছে। তারা নিয়োগের প্রস্তাব পাঠিয়েছে পিএসসিতে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ‘ব্যাহত’ হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, দেশে নতুন ও পুরনো মিলে মোট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫৪টি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ১৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়া প্রধান শিক্ষক সমপর্যায়ের পাঁচটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিইও) পদ শূন্য রয়েছে।

হাই স্কুলগুলোর ৫৩৩টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের সবকটি পদই শূন্য। অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে এসব হাই স্কুল পরিচালনা হচ্ছে। এতে নিচের স্তরেও পদ শূন্য হচ্ছে বলে মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আবার সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়ায় অধিকাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। সবমিলিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের প্রায় চারশ’ পদ শূন্য রয়েছে বলে মাউশির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘চাকরি যোগদানের সাত বছরের মধ্যে একজন শিক্ষকের সহকারী প্রধান শিক্ষক বা এডিইও এবং ১২ বছরে প্রধান শিক্ষক বা ডিইও হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার কথা; কিন্তু আমি নিজে ৩২ বছরেও পদোন্নতি পাচ্ছি না।’

নিজে এখন সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন জানিয়ে জালাল উদ্দিন বলেন, ‘শত শত শিক্ষক এভাবে বঞ্চনা, ক্ষোভ, হাতাশা নিয়ে অবসরে গেছেন।’

মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩৫৪টি সরকারি হাই স্কুল, ৬৪টি ডিইও অফিস ও ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের মোট পদ ১১ হাজার ৬১০টি। এর মধ্যে এক হাজার ৯৫২টি পদই শূন্য। সেই হিসেবে সহকারী শিক্ষকের প্রায় ১৭ শতাংশ পদ ফাঁকা রয়েছে।

হাই স্কুলের শূন্য পদ পূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রায় দুই হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি পিএসসিতে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের শূন্যও পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এক শিফটের বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং দুই শিফটের বিদ্যালয়ে দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে।

রাজধানীর দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদও দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- গভমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ও ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর দুটি বিদ্যালয়সহ ঢাকা অঞ্চলের ১৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার সাভারে একটি এবং গাজীপুর জেলায় একটি, গোপালগঞ্জে দুটি, ফরিদপুরে চারটি, মাদারীপুরে একটি, রাজবাড়ীর দুটি ও শরীয়তপুরে একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।

অন্যান্য শূন্য পদের মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলে আটটি, কুমিল্লা অঞ্চলে ৯টি, বরিশাল অঞ্চলে ১৩টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩১টি, খুলনা অঞ্চলে ২১টি, রাজশাহী অঞ্চলে ১৫টি ও সিলেট অঞ্চলে ১৩টি হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। আর পাঁচটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। জেলাগুলো হলো- কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও ভোলা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে গত ২৫ মে মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী প্রতিবেদন গত ১৭ জুন এ বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো হয়।

ওই প্রতিবেদনে সচিব বলেন, ‘অনেক সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক/সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই এসব শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি সভা/কর্মশালা করা যেতে পারে।’

এ বিষয়ে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ইনছান আলী বলেন, ‘সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেয় পিএসসি। মন্ত্রণালয় শুধু বিধিবিধানের আলোকে শূন্য পদের তালিকাসহ পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠাবে। এ নিয়ে কর্মশালা করার কী আছে? তবে এ ইস্যুতে মামলা থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয়; কিন্তু সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মামলা থাকার কথা নয়।’

দুজন মাধ্যমিক শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ‘নন-ক্যাডার’ থেকে হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। আর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দুটি ‘ক্যাডার পদ’।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক বছর আগে ‘নন-ক্যাডার’ থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, এর বিরুদ্ধে মামলা করেন মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ইনছান আলী ও সহসভাপতি জালাল উদ্দিন। এরপর নিয়োগ কার্যক্রম আটকে যায়। শিক্ষক নেতারা ‘নিয়মিত’ পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য আগামী ১৮ জুলাই ডিপিসির (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) সভা আহ্বান করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002208948135376