৪ দফা দাবিতে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তালা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

চার দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।  মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল নয়টায় বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের চার দফা নিয়ে কথা বলেন। 

দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা, পরীক্ষা কেন ধীরগতি, কি করছেন সভাপতি; রেজাল্ট কেন দশ মাসে, রেজাল্ট চাই এক মাসে; দুই বছরে দুই সেমিস্টার, ধিক্কার ধিক্কার; শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রুখে দাও, গুড়িয়ে দাও; ১২ মাসে সেমিস্টার, চলবে না, চলবে না; পরিবারের নামে প্রতারণা চলবে না, চলবে না; মিষ্টি কথা বাদ দেন, আমাদের ছেড়ে দেন;  আমরা কেন আদু ভাই, জবাব চাই জবাব চাই স্লোগান দিতে থাকেন।

বিভাগের ৩০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান ফাহাদ বলেন, আমরা আজকের মধ্যেই পরীক্ষার ডেট চাই। আর কোনো সময় দিতে রাজি না। আর এক্সাম পূজার ছুটির আগেই শেষ হওয়া চাই। না হলে এক্সাম দেব না। আমাদের নেক্সট সেমিস্টারগুলো ৪ মাসে করতে হবে এবং এটার ক্যালেন্ডার ২-১ দিনের মধ্যেই তৈরি করতে হবে। আর আমাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে এটা মেনে চলা হবে। কেননা বিগত সময়গুলোতে দেখেছি যে ক্যালেন্ডারে একটা পরীক্ষার ডেট থাকলেও ঠিক মতো ক্লাস হয়নি, পরীক্ষা ও হয়নি।

এসময় মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শেখ ফাহিম আহমেদ বলেন, আমরা চাই না ছোট ভাই-বোনেরা আর আমাদের মতো সেশন জটের মতো মানসিক যন্ত্রণায় থাকুক। কতটা ধীরগতি হলে একটা সেমিস্টার শেষ করতে ১২ মাস লেগে যায়। আমরা চার দফা দাবিতে আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। গত ২২ সেপ্টেম্বর আমরা বিভাগের সভাপতি বরাবর চার দফা পেশ করে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেই। এই চার দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।  

তাদের চার দফা হলো

১. ৩০ ব্যাচের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বরে কোর্স শুরু হয়। এরপরে ৬ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ২য় বর্ষ, ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়। এরপর বিভাগ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়। কিন্তু সেটি হয়নি। এরপর আমরা ১৮ সেপ্টেম্বর বিভাগের মতবিনিময় সভায় জানতে পারি, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। তিনি প্রশ্ন এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিজের কাছে রেখেছেন বলে জানিয়েছে বিভাগের সভাপতি। যার ফলে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরীক্ষা কবে শুরু হবে সেটিও বিভাগ আমাদের স্পষ্ট করেনি। একজন অন্যায়কারী কত শক্তিশালী হলে একাই একটা ব্যাচের পরীক্ষা বন্ধ করে রাখতে পারে! দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে অথচ কোনো সমাধান আসছে না। আমাদের এই এক সেমিস্টার প্রায় ১০ মাসেও শেষ হয়নি। একজন শিক্ষকের কারণে একটা ব্যাচের পরীক্ষা থেমে আছে। যেখানে আমরা ৪ মাসে সেমিস্টার শেষের দাবি জানাচ্ছি সেখানে ১০ মাস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটি অযৌক্তিক এবং কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

২. ৩১ ব্যাচের ২য় বর্ষ, ১ম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয় গত বছরের ২৫ নভেম্বর। ক্লাস শুরুর পর প্রায় ১০ মাস হয়ে যাচ্ছে অথচ কোনো অদৃশ্য কারণে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের ডেট পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না, সেটিও বিভাগ স্পষ্ট করেনি। অথচ রাবির কয়েকটি বিভাগ এবং ঢাবিতে ১২ মাসে ৩টি করে সেমিস্টার শেষ হয়। আমাদের অবস্থা কত করুণ সেটার বোঝা জন্য এর থেকে বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না।

৩. অধ্যাপক মোসতাক আহমেদের চারটি গুরুতর অভিযোগ ডকুমেন্টসহ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা তার অপসারণের আবেদন করি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদের পরে চারুকলার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মূল কারণ সেই বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতা। আমাদের বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কি ধরনের সহযোগিতা বা কি কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে তা আমাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। 

৪. আমরা প্রত্যেক বর্ষের শিক্ষার্থী ভয়াবহ সেশন জটে পড়েছি৷ বিভাগের কাছে কয়েক দফা আলোচনা করলেও তারা শুধু আমাদের আশ্বাসই দিয়ে গেছে। কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। তাই সব সেমিস্টার এখন থেকে পরীক্ষাসহ চার মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। অর্থাৎ এক বছরে তিন সেমিস্টার যাতে শেষ হয় সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতির কাছে চার দফা দাবি দিয়ে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থী। তবে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টিই শেখ পরিবারের নামে - dainik shiksha ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টিই শেখ পরিবারের নামে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত জানালো বুয়েট - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত জানালো বুয়েট ছাত্র কেনো প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে! - dainik shiksha ছাত্র কেনো প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে! শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই, তবুও তিনি উপাচার্য - dainik shiksha শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই, তবুও তিনি উপাচার্য পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিল - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব পদে আবারো ভাবী! - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব পদে আবারো ভাবী! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060570240020752