৪ শিশুর নামে ধর্ষণ মামলা : হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলো পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালে চার শিশুর বিরুদ্ধে করা মামলার ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালামসহ চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে পুলিশ। এই আপিলের শুনানি ‘নট টুডে’ করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত।
 
পুলিশের পক্ষে করা আবেদনের ওপর শুনানিতে তাদের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বারজজ আদালত ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
 
আদালতে আজ অভিযুক্ত চার শিশুর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল।
 
এর আগে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের দেয়া রায়ে অভিযুক্ত চার শিশুকে গ্রেফতার, আদালতে হাজির করা, আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো অবৈধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ থানায় করা মামলা বাতিল করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে এবং সমাজসেবা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া সারাদেশের পুলিশের কাছে শিশু আইন বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা প্রজ্ঞাপন আকারে জানানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
 
বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা চার শিশুর বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এসব রায় দেন। আদালতে ওইদিন শিশুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও এএম জামিউল হক ফয়সাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল।
 
বাকেরগঞ্জে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর চার শিশুকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় ওই দিনই তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণে অভিযুক্ত শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১১ বছর। পরদিন ৭ অক্টোবর বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে ওই চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করা হয়।
 
ওই বছরের ৮ অক্টোবর রাতেই সংবাদটি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চের নজরে আসে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসিয়ে এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদেশে ওই রাতেই চার শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চার শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
 
এছাড়া ওই চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর ওই রাতেই চার শিশুকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন বরিশালের আদালত।
 
এর পরদিন সকালেই চার শিশুকে নিজ নিজ বাড়িতে অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয় প্রশাসন। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজসেবা কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরা হাইকোর্টে হাজির হন। আদালত তাদের বক্তব্য শোনার পর রুল জারি করেন ও রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ওই মামলায় চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) পক্ষভুক্ত হয়।
 
চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোয় বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার সঙ্গে যুক্ত বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি আবুল কালামসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এছাড়া যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য নির্ধারণ করে তা গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে তা দেশের সব পুলিশের কাছে বিজ্ঞপ্তি আকারে পাঠাতে বলা হয়।
 
বাকেরগঞ্জ থানার সাবেক ওসিসহ চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে রায়ে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহ’র ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়।
 
পাশাপাশি বাকেরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি আবুল কালামসহ সংশ্লিষ্ট গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত দুই এসআইসহ মোট তিনজনকে বহিষ্কার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন আদালত। আর পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় পুলিশের যে চারজন সদস্য ওই শিশুদেরকে ভ্যানে ছুঁড়ে ফেলেছিল, যদি তার প্রমাণ মেলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এ নিয়ে মোট সাত পুলিশকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051810741424561