দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর : রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আউলিয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও এসব শিক্ষার্থী এখনও প্রবেশপত্র পাননি।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি আবদুল মমিন তার ভাতিজাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেন। ফলে তিনি প্রধান শিক্ষককে শায়েস্তা করতে নানা ফন্দি করেন। এরই অংশ হিসেবে নানা অভিযোগ তুলে গত বছরের ১৩ মার্চ প্রধান শিক্ষক বলরাম রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করে সহকারী প্রধান শিক্ষক মানিককুজ্জামান স্বপনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। এরপর সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়কে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেন। ফলে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবসহ বিভিন্ন খাতের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। যার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের অর্থও ছিল। এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা ২৩ ডিসেম্বর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষের দিনে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক বলরাম রায়কে স্বপদে বহাল করা হয়। তবে ওইদিন থেকে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি বিদ্যালয়ে নিজের ইচ্ছেমতো যাতায়াত শুরু করেন। এ নিয়ে কেউ কিছু বললে তাদের নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকেন। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসায় তিনি বিদ্যালয়ে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ করে দেন।
সরেজমিন বিদ্যালয় পরিদর্শণকালে কথা হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মানিকুজ্জামান স্বপন স্যার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা বিদ্যালয়ে দিতে নিষেধ করেন।....... তিনি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম পূরণের জন্য ২হাাজার ৩৫০টাকা করে আদায় করেন। কিন্তু আর মাত্র ক’দিন পরই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। অথচ কোন শিক্ষার্থীই এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পায়নি। পরীক্ষার্থী তারিফুল ইসলাম বলেন, স্বপন স্যার এখন স্কুলে আসেননা। তাছাড়া তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারও বন্ধ। পরীক্ষার্থী জিম মনি বলেন, আমার বাবা-মা খেয়ে না খেয়ে ফরম পূরণের টাকা স্বপন স্যারকে দিয়েছেন। আমি যদি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারি তাহলে আমার বাবা-মার সব আশা ধুলোয় মিশে যাবে। একই কথা বলেন পরীক্ষার্থী দিলরুবা আখতারও।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলরাম রায় বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসছেননা। কতজন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হয়েছে সে তালিকাও আমাকে দেয়া হয়নি। অথচ আর মাত্র ক’দিন পরই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। কেন্দ্র ফি’র অর্থ জমা না দিলে প্রবেশপত্র পাওয়া যাবেনা। কিন্তু ব্যাংক একাউন্ট শূন্য থাকায় ও কোন কমিটি না থাকায় সে অর্থের যোগান কিভাবে হবে সেটাও বুঝতে পারছিনা। তারপরও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি- যাতে করে তারা সবাই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক-কর্মচারিরদর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি জানা ছিলনা। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক মানিকুজ্জামান স্বপনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একারণে তার মন্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।