ভোলার দৌলতখানের ৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪২ জন শিক্ষার্থীর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ ৬ মাসের উপবৃত্তির ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা চলছে। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন মিঠু ও তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী মো. ছাব্বির হোসেনের দিকে। এই ৪২ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা নগদের মাধ্যমে পেতে কর্মচারী ছাব্বির ও মায়ের নম্বর এন্ট্রি করা হয়েছে। আর সম্পূর্ণ বিষয়টি হয়েছে শিক্ষক মিঠুর ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘অর্না নেটের’ মাধ্যমে। আর ওই ৭ স্কুলের শিক্ষকদের দাবি শিক্ষক মিঠু ছাড়া কেউ স্কুলগুলোর পাসওয়ার্ড জানেন না। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
এদিকে বিষয়টি নজরে এসেছে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদেরও। জালিয়াতির বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও ভোলার জেলা শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে বলে শুক্রবার (১১ জুন) দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসেন।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মার্কেটে পরিচালিত ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অর্না নেটের মালিক উপজেলার হাজিপুর এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন মিঠু। ওই প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর মো: ছাব্বির হোসেন নিজের ও তার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মোবাইল নম্বর শিক্ষার্থীদের নামের বিপরীতে বসিয়ে দিয়েছেন। নিজেদের মোবাইলে টাকা পেতে এ জালিয়াতি করেছেন। আর এ কাজটি সম্পাদন করেছেন শিক্ষক মিঠুর ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা এন্ট্রি করার সময়।
স্কুলগুলো হচ্ছে দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম রাম রতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুকদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিদারুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর পদ্মা রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বামনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের উপবৃত্তির কাজ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষকদের।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের উপবৃত্তির তালিকা ইন্টারনেট থেকে বের করতে গিয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের তালিকাও চলে আসে। দুই সালের তালিকা যাচাই করতে গিয়ে এ জালিয়াতি দেখতে পাই। জালিয়াতির শিকার স্কুলগুলোর শিক্ষকদের অভিযোগ, অর্না নেটের মালিক শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন মিঠু ছাড়া বিদ্যালয়গুলোর পাসওয়ার্ড, ইএমআইএস কোড অন্য কারও জানা থাকার কথা নয়। ৪২ জন শিক্ষার্থীর নামের সাথে ছাব্বিরও তার মা ছায়েরা খাতুনের মোবাইল নাম্বার যথাক্রমে- ০১৫৮০৭২৩১০৯, ০১৬০৯৫৪৭৪১৬ এবং তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাব্বির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাকে সাজ্জাদ হোসেন মিঠু স্যার মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাকে ফাঁসাতে তিনিই এ কাজ করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন মিঠু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাব্বির অন্যত্রে কাজ করবে বলে স্বেচ্ছায় আমার প্রতিষ্ঠানের কাজ ছেড়ে দিয়েছে। সে এ কাজ করেছে। তাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি শিক্ষকরা জানিয়েছেন। তালিকা যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি স্যার ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি। তবে, কেউ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করতে পারবে না।
এদিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। অধিদপ্তর থেকে যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় তা নেয়া হবে। তাই সব তথ্য প্রমাণসহ ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।