ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেটের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের প্যানেল প্রকাশ আপাতত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে স্থগিতাদেশ দিলো কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী চার সপ্তাহের জন্য এই নির্দেশ স্থগিত রাখা হয়েছে।
৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের প্যানেল প্রকাশ নিয়ে সম্প্রতিই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। গত ১২ ডিসেম্বর জেলা ভিত্তিক নিয়োগের প্যানেল আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল। গতকাল বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। তাঁরাই বিচারপতি সিংহের দেওয়া নির্দেশে চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার তদন্তকারী সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছে, যাঁরা মামলাকারী তাঁরা টেট উত্তীর্ণ কি না। আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে এ ব্যাপারে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে সিবিআইকে। ৪ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
আগে যা হয়েছিল
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের টেটের পর দু’টি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল। একটি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং অন্যটি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। বিচারপতি সিংহ আগে ওই দুই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পর্ষদকে। গত ১২ ডিসেম্বর পর্ষদ আদালতে হলফনামা দেয়। পর্ষদ জানায়, এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি প্যানেল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগের রীতি মেনে প্যানেল প্রকাশের নিয়ম নেই। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে দু’টি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল দেখতে চেয়েছিল আদালত। বিচারপতি সিংহ জানান, নিয়োগের প্যানেল খতিয়ে দেখার অধিকার রয়েছে আদালতের। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্যানেল প্রকাশ না করে কি পর্ষদ কাউকে আড়াল করতে চাইছে?
এই মামলার আগের শুনানিতে বিচারপতি সিংহ বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন, এমন ৯৪ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছিলেন। পর্ষদের আইনজীবী ৩০ নভেম্বরের শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ওই ৯৪ জনকে শূন্যপদের বাইরে থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। এমনকি, যে দু’টি প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো সঠিক নয়। প্যানেলের জন্য আরও সময় দেওয়া হোক। শুনে বিচারপতি সিংহ বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘আর কত দিন বঞ্চিতেরা অপেক্ষায় থাকবেন! তাঁদের কাছে প্রতিটা দিনের মূল্য রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে।
তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘দেড় মাস সময় দেওয়া হল। তার পরেও হলফনামা দিতে পারলেন না? আইনজীবীদের উপর চাপ বাড়লে পর্ষদ নতুন আইনজীবী নিয়োগ করুক।
এর পরে আদালত পর্ষদকে আরও সাত দিন সময় দেন। বিচারপতি জানিয়েছিলেন, ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পর্ষদকে হলফনামায় দু’টি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল আদালতে জমা দিতে হবে। সেই মামলার শুনানি ছিলো ১২ ডিসেম্বর। যেখানে পর্ষদকে প্যানেল প্রকাশ করতে না চাওয়ার জন্য ধমক দেন বিচারপতি।
বিচারপতি বলেছিলেন, আমি প্রাথমিকের প্যানেল দেখতে চাই। মেয়াদ শেষের আগে একটা প্যানেল প্রস্তুত হয়। সেটি দেখতে চাই। নিয়োগের প্যানেল খতিয়ে দেখার অধিকার আদালতের অধিকার রয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।