আমাদের বার্তা, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক শিক্ষক ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে ৯ বছর বিদেশে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসায় বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বাগতা সাঈদ যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পূর্ণ বেতনে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি মঞ্জুর করে।
তিনি লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিলোসফি, রিলিজয়ন অ্যান্ড হিস্ট্রি অব সায়েন্সের অধ্যাপক ড. এমা টোমালিন ও মাইকেল বার্লিনের অধীনে ‘Devi Shakti and devi as shakti; is the great goddess in hinduism a symbol of power for women? (A feminist reading of goddess)’ এই শিরোনামে পোস্ট গ্রাজুয়েট পিএইচডি রিসার্চার হিসেবে গবেষণার অনুমোদন পান।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিএইচডি শেষ না করতে পারায় তিনি দ্বিতীয় দফায় ২ বছর ছুটি বাড়িয়ে নেন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ পর্যন্ত বেতন ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়া। পরবর্তীতে তিনি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মে পর্যন্ত অননুমোদিত ছুটি কাটান ২ বছর।
তিনি দীর্ঘ ৯ বছরে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ২৮ মে বিভাগে যোগাদান করেন। কিন্তু তিনি তার ডিগ্রি সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেননি। এই ৯ বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নেন।
উল্লেখ্য, ইউজিসির শিক্ষকদের জন্য ‘ইউজিসি বৈদেশিক পিএইচডি বৃত্তি নীতিমালায়’ বলা হয়েছে- বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করার জন্য বিদেশ গিয়ে ডিগ্রি সম্পন্ন না করলে বৃত্তির পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে।
উল্লেখ্য ড. এমা টোমালিনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল প্রোফাইলে স্বাগতা সাঈদের পোস্ট গ্রেজুয়েট পিএইচডি রিসার্চার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া তাকে ই-মেইল করা হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক স্বাগতা সাঈদ বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারিনি। আমি অসুস্থতার কাগজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করিনি। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর চাইলে আমি আমার মেডিকেল সার্টিফিকেট ও আনুষাঙ্গিক তথ্য এবং উপাত্ত জমা দিব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ছুটির বাইরে অতিরিক্ত দুই বছরের ছুটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করেননি কিংবা কোনো কারণ দর্শাননি তিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরে অনুনমোদিত ছুটির বাইরে অতিরিক্ত ২ বছরের জন্য তিনি ছুটির আবেদন করেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানা এ্যানি শিক্ষা ছুটি শেষ হলেও এখনো ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগদানের জন্য তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে শিক্ষক ও অধ্যাপক আছেন যারা বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা পিএইচডি'র জন্য গমন করলেও তা সম্পন্ন করতে পারেন না। কেন তারা ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারছেন না তা আমরা খতিয়ে দেখব।’
তিনি বলেন, ‘স্বগতা সাঈদের বিষয়ে আমার কাছে এখনো কোনো দাপ্তরিক নথি আসেনি। আসলে তার বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি নিলাঞ্জন কুমার সাহা বলেন, স্বাগতা সাঈদের ছুটি সংক্রান্ত কোনো ফাইল আমার কাছে আসেনি। গতকাল (৮ নভেম্বর) শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত মিটিং হয়েছে, সেখানেও তার বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না। তাকে অননুমোদিত ছুটি দেওয়া হবে কি না তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।