ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের সেই ফাইল কোথায় কেউ জানে না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতির কথা প্রকাশ্যে এসেছে আগেই। এবার নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে অভিযুক্তদের বহিষ্কার সংশ্লিষ্ট একটি ফাইল নিয়ে। এ ফাইলে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের চিঠি, কারণ দর্শানোর নোটিশ ও তিন শিক্ষার্থীর সময় বৃদ্ধির আবেদনের নথিপত্র রয়েছে। কিন্তু ফাইলটি কোথায় আছে কেউ জানেন না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানরা একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চাইছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন খামখেয়ালিপনায় প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসনের তদন্তে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় পাঁচ অভিযুক্তকে। এরা হলেন-ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, হালিমা আক্তার ঊর্মি, ইসরাত জাহান মিম, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান। একইসঙ্গে তাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। তাদের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তাবাসসুম ও মোয়াবিয়া নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে অন্তরাসহ বাকি তিনজন জবাব না দিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। কিন্তু এখন সেই ফাইলটিরই হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় সেই আবেদনের সুরাহা না করায় ওই তিনজন এখনো জবাব দেননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া আটকে আছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে খোঁজ নিলে সেই ফাইল সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেননি দপ্তরপ্রধানরা। নিয়ম অনুযায়ী ফাইলটি প্রশাসনের উপরেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার, আইন প্রশাসক অথবা উপাচার্যের দপ্তরে থাকার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চার দপ্তরপ্রধানদের কেউ বলতে পারছেন না ফাইলটি কোথায়, কোন অবস্থায় আছে? দপ্তরপ্রধানরা ফাইলটির অবস্থান নিয়ে একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।

জানা যায়, অভিযুক্ত ছাত্রীদের সময় চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফাইলটি যায় একাডেমিক শাখার উপরেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানের দপ্তরে। ফাইলের বিষয়ে তিনি বলেন, সময় বৃদ্ধির আবেদন আসার পর ফাইলটি রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে উপাচার্যের কার্যালয় ঘুরে ফের আমার কাছে আসার কথা। কিন্তু এখনো আসেনি।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, ফাইল আমার কাছে নেই। আমি ফাইল এন্ট্রি করে আইন প্রশাসককে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে উপাচার্যের কাছে যাবে, তিনিই সময় বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আইন প্রশাসক ড. আনিচুর রহমান বলেন, ফাইলে কোনো আইনি পরামর্শের প্রয়োজন হলে শুধু তখনই আইন প্রশাসকের কাছে আসে। সময় বৃদ্ধির আবেদন বা এ জাতীয় কোনো ফাইল আমার কাছে আসেনি। সাধারণত এ বিষয়গুলো রেজিস্ট্রারই দেখে থাকেন।

উপাচার্যের দপ্তরে ফাইলটি আছে কিনা জানতে চাইলে তার একান্ত সচিব মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, আমার কাছে অর্থাৎ ভিসির কার্যালয়ে এ ধরনের কোনো ফাইল নেই। সাধারণত এমন জরুরি ফাইলগুলো রেজিস্ট্রার সরাসরি অনুমোদন করে নেন। বিষয়টি রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।

জানা যায়, ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় উচ্চ আদালতের তদন্তে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে আদালত থেকে প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও ফোনে ধারণ করা নির্যাতনের ভিডিও উদ্ধারেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে এ ঘটনায় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করলেও এখনো সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি কমিটি।

এদিকে প্রশাসনের গড়িমসির সুযোগ নিয়ে অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে সময়ক্ষেপণ করে এবং স্থায়ী বহিষ্কার ঠেকাতে নানাভাবে তদবির করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024979114532471