৫০ কিমি খাল পেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র

রাঙামাটি প্রতিনিধি |

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় ৩ নম্বর ফারুয়া ইউনিয়ন। গত ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা এই ইউনিয়নের ফারুয়া উচ্চবিদ্যালয়েরমোট ৭৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ৫০ কিলোমিটার দূরে নৌপথে রাইংখ্যং খাল পাড়ি তাদের আসতে হয় উপজেলার সদরের বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে।

শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেক এবং রাইংখ্যং নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সদরে আসতে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে এখন ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ফলে একসময় বাধ্য হয়েই উপজেলা সদরে এসে পরীক্ষার্থীদের কাউকে আত্মীয়ের বাড়ি, আবার কাউকে মাসব্যাপী হোটেলে ভাড়া নিয়ে থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো। তবে এবার বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান পরীক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন।

 সোমবার বিলাইছড়ি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের সামনে প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে কথা হলে তিনি এসব তথ্য জানান। 

এ সময় তাঁকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মেয়েদের জন্য উপজেলা নীলাদ্রি রিসোর্টে এবং ছেলেদের জন্য উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এ বছর শুষ্ক মৌসুমে রাইংখ্যং নদী প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে, ফলে এই এলাকার-শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার গল্প তুলে ধরে প্রধান শিক্ষক আরও জানান, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য গত ২৮ এপ্রিল ফারুয়া থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা রওনা দেন। ২৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে চারটায় তাদের নৌকা ফারুয়া থেকে রওনা হয়। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রয়েছে তাদের বই, জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী।

নদীতে পানি না থাকায় নৌকা বারবার মাটিতে আটকে যাচ্ছিল। শিক্ষার্থীরা নদীতে নেমে নৌকা ঠেলে ঠেলে বিলাইছড়ি সদর অভিমুখে নৌকা নিয়ে এসেছে। মোট ছয়টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার মধ্যে প্রথম নৌকা বিলাইছড়িতে পৌঁছায় বিকেল পাঁচটায়। পরবর্তীকালে বাকি নৌকাগুলো ক্রমান্বয়ে এসে পৌঁছায়। শেষ নৌকাটি পৌঁছায় রাত সাড়ে ১০টায়। নৌকা থেকে জিনিসপত্র নামাতে রাত সাড়ে ১১ হয়ে গেছে সেই দিন। প্রখর রৌদ্রে নৌকা ঠেলতে ঠেলতে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এভাবে প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিলাইছড়ি সদরে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় বলে জানান এই শিক্ষক।

দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘যদি ফারুয়ায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকত তাহলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। তাই অতিসত্বর ফারুয়ায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু করা খুবই জরুরি। এটা ফারুয়া অভিভাবকদের প্রাণের দাবি।’

এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়া, পানির ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সহায়তার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা ও ইউএনও মিজানুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এ বিষয়ে বিলাইছড়ির ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে, শুকিয়ে যাওয়া রাইংখ্যং খাল বেয়ে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে তাদের উপজেলা সদরে এসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। তবে তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে যত দিন এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তত দিন বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা সদর নীলাদ্রি রিসোর্টে মেয়েদের এবং উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছেলে ও শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করেছি।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘ফারুয়া উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দিনে এসে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই আমরা পরীক্ষা চলাকালীন তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029489994049072