২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মরত পদবঞ্চিত প্রধান শিক্ষকদের কর্মজীবন চলছে সার্বক্ষণিক যন্ত্রণা ও হতাশার মাঝে। তাদের অন্যতম মানসিক যন্ত্রণা হলো ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে বিধিবদ্ধভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে নিজ নিজ এলাকায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ না করার তাদের ভাগ্যে পদবি হয়ে দাঁড়ায় সহকারী শিক্ষকের। মহামান্য হাইকোর্টে রিট করে সফলতা মিললেও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মহল কার্যকর হতে দিচ্ছে না।
এদিকে, এলাকায় শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সুধী সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। কর্মকর্তাসহ সকলেই তাদের চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক পদায়ন করবে বলে বলে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখেন। প্রধান শিক্ষক হয়েও বেতন পেতে হচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলে। একদিকে নেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অপরদিকে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক দৈন্যতা। ঈদসহ উৎসবমুখর দিনগুলো চলছে সীমাহীন যন্ত্রণার মাঝে। এক বুক জ্বালা নিয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন ৫ হাজার একজন কর্মরত পদহারা প্রধান শিক্ষক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় ২৬১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। বর্তমান সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। ডিজিটাল বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকেরাই সেই স্বপ্নের স্বারথী হয়। জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পূর্বে ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষকেরা উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক সুপারিশকৃত। কিন্তু স্কুল জাতীয়করণের পর শিক্ষক জাতীয়করণ করা হয়। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত না করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। সরকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ায় আমরা প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করার জন্য মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মন্ত্রনালয়ে আবেদন করে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় মর্যাদা ফেরত পাওয়া এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। হাইকোর্ট প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার রায়ের আলোকে পদবঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেট করার জন্য আবেদন করেও কোনো ফল পায়নি। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হচ্ছে না।এখনো অনেক মামলা হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে চলমান আছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সামাজিক মর্যাদাও ক্ষুন্ন হচ্ছে। জাতীয়করণের সময় যে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে ক, খ, গ, ঘ চকে ও এক নং প্রধান শিক্ষক পদে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
এ ছাড়া জাতীয়করণের নীতিমালা বিধি ৪(১) খ তে প্রয়োজনে যোগ্যতা না থাকলে জাতীয়করণের পর তিন বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনের সঙ্গে নিয়োগের আদেশ দেয়া হবে কিন্তু আমরা যোগ্যতা সম্পন্ন। স্মারক নং ৩৮.০০৭.০১৫.০০০. ০৩.০০.২০১৩-৯৯৯, তরিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র বলা হয়েছে, সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ পূর্বে যারা প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তারা স্বপদে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়করণের গেজেট বিধিমালার ক তে বলা আছে শিক্ষকরা কোনো অধিগ্রহণকৃত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক পদে নিযুক্ত ব্যক্তি যিনি সরকার বা ক্ষেত্রমতো যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত পত্রিকা বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অব্যাহতভাবে উক্ত বিদ্যালয় কর্মরত থাকেন। বিধি মোতাবেক তিনিই স্বপদে বহাল থাকবেন। নিয়োগের স্বপক্ষে সব ধরনের বিধি থাকার পরও প্রধান শিক্ষক পদে গেজেটভুক্ত করা হচ্ছে না।
বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি ২৪ আগস্ট ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধিত গেজেট (৪) আদেশ অন্যান্য বিধিমোতাবেক জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেজেট বাস্তবায়ন ও বর্তমান কর্মরত জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয় পদবঞ্চিত ও শিক্ষকদের, প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্তকরণসহ চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক না দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার মুখ থুবড়ে পড়বে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ নব-জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, ঢাকা
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]