৯ মাসেও শেষ হয়নি গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ভোগান্তি কমাতে দেশে প্রথমবারের মতো ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সাময়িক আশা জাগালেও এ প্রক্রিয়া আস্থা অর্জন করতে পারেনি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের । শুরু থেকে আবেদনে জটিলতা, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ফি প্রদানের নিয়মের ফারাক, কেন্দ্র বিভ্রান্তির  মতো বিষয়গুলো ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। দেখা গেছে, প্রথমবারের ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়েছে এবারের দ্বিতীয়বারের গুচ্ছভর্তি প্রক্রিয়ায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা এবং গাফিলতিই এ ভোগান্তি বাড়ানোর জন্য দায়ী।

গুচ্ছের প্রথম আসরে অংশগ্রহণকারী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদীব জামান বলেন, ‘পুরো সিস্টেমটাই অসঙ্গতিতে ভরা, প্রথমবার হিসাবে ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। তবে দ্বিতীয়বারেও তারা সিস্টেম ঠিক করতে পারেনি। একেক ভার্সিটির মাইগ্রেশন সিস্টেম আলাদা এবং প্রসেস খুবই স্লো। কর্তৃপক্ষ নিজেদের মনমাফিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা খুবই হতাশার বিষয়।’

মো. একরাম হোসেন নামে একজন অভিভাবক বলেন, গুচ্ছভর্তিতে শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু ছিল, তবে সপ্তম মাইগ্রেশনে এসে এটা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে অনেক মেধাবীরা যোগ্যতা অনুযায়ী

বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বিষয়টির সমাধান করতে হয়েছে। প্রতিবারেই যদি এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা হলে তো এ পদ্ধতি চালু রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

গত বছরের ১ এপ্রিল আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলেও নয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া স¤পন্ন হয়নি গুচ্ছভুক্ত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই। ফলে নতুন অধ্যয়নের সুযোগ পাওয়া ২১০০০ শিক্ষার্থীর ক্লাস কার্যক্রমের শুরু নিয়েও রয়েছে সংশয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অবশিষ্ট ২১ বিশ্ববিদ্যালয়েই আসন ফাঁকা রয়েছে সর্বনিম্ন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫৩০টি পর্যন্ত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৩৫২টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৮টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২৯টি। এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৮৯টি আসন ফাঁকা রয়েছে। গতবছরের মতো এবারও যদি আসন ফাঁকা রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে তা হলে তা চরম বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করেছিলাম। তবে আদালতের নির্দেশে তা পুনরায় চালু করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, শুরু থেকে গুচ্ছ ব্যবস্থার অসঙ্গতি দৃশ্যমান। একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা একেক রকম যার ফলে সমন্বয়হীনতা থেকে যাচ্ছেই। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ভোগান্তি কমাতে আমরা শিক্ষক সমিতির ৫ম সাধারণসভায় আগামী বছর গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হই।’

একই কথা বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জানান, গুচ্ছ পদ্ধতি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথবারের চেয়েও এবার দ্বিতীয় দফায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। আমরা শিক্ষক সমিতির নতুন এক্সিকিউটিভ বডির সাধারণসভায় বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা করব।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গুচ্ছ প্রক্রিয়া নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042779445648193