‘আইএমএফের শর্ত মেনে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে’

রাবি প্রতিনিধি |

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নামে বাংলাদেশ সরকারের ওস্তাদ প্রতিষ্ঠান আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সেই আইএমএফের শর্ত মেনে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) পরিবহন মার্কেটের আমতলায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আয়োজনে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মজুরি বাড়ছে না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নামে বাংলাদেশ সরকারের ওস্তাদ প্রতিষ্ঠান আছে। তারা নানাভাবে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেয়, পথ দেখায়। আইএমএফ লোন দিচ্ছে সঙ্গে শর্তও দিচ্ছে। সেগুলো সরকারের মেনে নিতে কোনো সমস্যা নেই। সেগুলোর মধ্যে জিনিসপত্রের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। তারা বলছে, সামনে আমরা আরও বাড়াইতেই থাকব। তারা বাড়ানো না বলে বলে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই শব্দটা তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে শিখেছে।’

তিনি বলেন, ‘‘তারা বলে, ‘আমরা সমন্বয় করব।’ তাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, এটা তো জনগণের ওপরে যাচ্ছে। জিনিসত্রের দাম বাড়ালেও মজুরি বাড়ছে না। মজুরি ছাড়া বাকি সবকিছুর দাম বাড়াতে তারা সব সময় চায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ইভিনিং (সান্ধ্য), উইকেন্ডসহ (সাপ্তাহিক) নানা রকম প্রোগ্রাম দিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এতে নামে পাবলিক বিশ্নবিদ্যালয় থাকছে কিন্তু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে একটি বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে ফেলছে। সিলেবাসগুলো থেকে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, অস্তিত্ব জানার বিষগুলোকে বাদ দিয়ে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি এভাবে বাণিজ্যিক হয় কিংবা উন্নয়ন যদি এরকম হয় যে, সুন্দরবন শেষ করে রামপাল, সারা দেশকে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ফেলে রুপপুর তাহলে দেশের উন্নয়নের এই ধারা থাকলে দেশের গণতন্ত্রেরও এই ধারাই হওয়ার কথা। সেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য স্বৈরতন্ত্রের বাইরে কোনো ব্যবস্থা হওয়ার কথা না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মানুষের পাশাপাশি অনেক বেশি আক্রান্ত অবস্থায় আছে তরুণরা। তাদের চিন্তার জগত, মত প্রকাশের জগত, মানুষ হিসেবে তাদের অস্তিত্ব একটা ভয়ঙ্কর হুমকির মুখে। সুতরাং এই তরুণকেই কিন্তু এটার প্রতিবাদ করতে হবে। যে মানুষ নিজেকে সম্মান করে সে অবশ্যই অন্যদের সম্মান করে। সে কখনও অন্যায়ের সামনে, অবিচারের সামনে চুপ থাকতে পারে না। আশা করি এই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরি হবে।’

সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আজকে যদি রাকসু হয় তাহলে আমরা গুণগত মানের কতটা পরিবর্তন দেখবো? কিছু পরিবর্তন হয়তা আমরা দেখবো কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কি পাবো? আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাবো না। কেন পাবো না এই প্রশ্নটা আমাদের সবার খুঁজ বের করতে হবে। একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যম যদি আমরা এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমাদের কাজটা শেষ হয়ে যাবে। তবে এটির উপর আমরা যদি ঠিকমতো নজরদারি করতে না পারি তাহলে সেটি কাজে দেবে না।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের স্কুল জীবন থেকেই মেরে ফেলা হয়। এক বস্তা বই তাকে মুখস্ত করতে হয় কারণ তাকে ফার্স্ট হতে হবে। প্রাইমারি স্কুল থেকে তাদের এ জার্নি শুরু হয়। যার ফলে তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তখন তাদের মাথায় আর মগজ থাকে না। তাদর মাথাটা থাকে কাঁধের ওপর কিন্তু তাদের মগজটা থাকে না। শিক্ষকদেরও একই অবস্থা শিক্ষক ৫০ বছরের পুরনো একটা নোট পড়াচ্ছেন।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য প্রদান করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ, ফাকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখার সভাপতি নাইমুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খানের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমবয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036780834197998