দৈনিক শিক্ষাডটকম, কলকাতা: স্বল্প সময়ের মধ্যে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
দুবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত জিহাদকে টিআই প্যারেডের জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছি। জিহাদকে নিয়ে ফের এই বাগজোলা খালে যেখানে লাশ ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেখানে এসেছি।’
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে গ্রেফতার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিতে নেমে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ডিবিপ্রধান।
লাশ উদ্ধারের চেষ্টায় ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট কাজ করছে জানিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা তাদের পাশে আছি। লাশ উদ্ধারের ক্ষেত্রে তাদের যে আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা, তাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করতে পারব।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে কলকাতায় হত্যা করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওই ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে কলকাতা পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। এটা এমন একটা ঘটনা যে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মেনে নেয়ার মতো না। একটা সভ্য সমাজে এত বড় নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। সংসদ এমপি আনারকে হত্যা করে তার লাশটাকে আলাদা করে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা মাফিক গুম করা হয়।
ডিবিপ্রধান আরও জানান, ভারতে তদন্ত করে দেশে ফিরে সিলাস্তি রহমানের সঙ্গে কথা বলা হবে। যে ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেখানে তিনি ছিলেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে তার কী ভূমিকা ছিল, সেটা সিলিস্তা রহমানের সঙ্গে কথা বলেই জানা যাবে।
এর আগে দুপুরে সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের কলকাতার সঞ্জীবনী গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে তদন্তে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল কলকাতা পুলিশও।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হওয়ার পর তার রহস্য উদঘাটন এবং তার খণ্ডিত দেহের অংশ খুঁজে বের করতে গত ২৬ মে সকালে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে কলকাতা যান ডিবির তিন সদস্যের একটি দল।
এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতার আসামিরা হলো- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
গ্রেফতার তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৪ মে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এমপি আনার কলকাতার সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তার একটি সিসিটিভি ফুটেজ দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, এমপি আনার অন্য দুজনের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু জীবিত আর বের হননি।
ফুটেজ অনুযায়ী, ১৩ মে দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে সঞ্জীবনী গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে ঢোকেন এমপি আনার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিমুল ভুঁইয়া ও তার সহযোগী ফয়সাল। এমপি আনার বেশ শান্তশিষ্টভাবে দরজার বাইরে র্যাকে তার জুতা রাখেন। পরে ফ্ল্যাটে ঢোকেন তিনি।
কয়েক ঘণ্টা পর বের হয়ে আসেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, হাতে ছিল একটা লাগেজ। এরপর তার সঙ্গে পলিথিনের ব্যাগ হাতে বের হন আরেকজন। বের হওয়ার সময় শিমুল দরজা লক করে দেন। লিফট দিয়ে নেমে তারা বের হয়ে যান।
গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিহাদ জানিয়েছে- আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে জিহাদ। পরে মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া হয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, জিহাদ হাওলাদার একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তিনি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার জয়নাল হাওলাদারের ছেলে। ভারতের মুম্বাই শহরে বসবাস করতেন এবং সেখানে একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতেন তিনি।