একজন বন্ধুর ঘাড়ে হাত রেখে এক পায়ে ভর দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছেন আয়াত উল্লাহ। গত শুক্রবার বিকেলে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলার একটি কেবিনে গিয়ে চোখে পরে এই দৃশ্য। গত ৫ আগস্ট রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন তিনি। ওই ঘটনায় পায়ের রগ কেটে দেয়া হয় তার। পঙ্গুত্বের শিকার আয়াতের জীবন চলছে এখন হুইল চেয়ারের গতিতে। ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশ নিয়ে তার চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হলে আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেই রাতে আমি ক্যাম্পাসে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরের সামনে পৌঁছালে হেলমেট ও মাক্স পরিহিত ৭-৮ জন তরুণ আমার ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে তিন থেকে চারজন আমাকে জাপটে ধরে এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের তানজিদ মঞ্জু জামায়াত-শিবির স্টাইলে আমার রগ কেটে দেয়।’
হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাঈদ বলেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পায়ের যে রগগুলো থেকে শক্তি পাই, আয়াতের বাম পায়ের তেমনই একটি রগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ মাস তাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে। এরপর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে একটা সার্জারি (অস্ত্রোপাচার) করতে হবে। এরপর আসলে বলা যাবে কতোটা স্বাভাবিকভাবে তিনি চলাফেরা করতে পারবেন।’
নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার একটি ছবি দেখিয়ে আয়াত উল্লাহ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) পক্ষে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। নির্বাচন পরিচালনা টিমের পক্ষে তিনি নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। কিন্তু সেই রাজনীতি এখন তার জীবনের জন্য বেদনার অধ্যায় জন্ম দিয়েছে।
আয়াত উল্লাহ তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া তানজিদ মঞ্জুকে দায়ী করেন। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই রাতের ঘটনায় আমি নিজেই ভিকটিম। আমাকে আহত করা হয়েছে। এখন উল্টো আমার ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে আমার।’