‘জোর করে পদত্যাগ’, চট্টগ্রামের সেই উপাধ্যক্ষ মারা গেছেন

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম |

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পর জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা চট্টগ্রামের হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব মারা গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগ করানো হয়েছিল, সেদিন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। সর্বশেষ শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মারা গেছেন। 

কলেজটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) চয়ন দাশ প্রেরিত এক শোক বার্তায় বলা হয়, হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজর উপাধ্যক্ষ এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আইয়ুব আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে হাজেরা-তজু কলেজ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।  

কলেজটির সাবেক উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবের মৃত্যুর খবরে শোকাহত সকলেই। তার মৃত্যুতে তারই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নামধারী শিক্ষার্থীসহ একটি দল কলেজের উপাধ্যক্ষ আইয়ুবের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শোক জানানোর পাশাপাশি ৫ আগস্ট পরবর্তী স্কুল ও কলেজে পদত্যাগ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। 

সাফকাত নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, অধ্যাপক আইয়ুব আর নেই। বাঁশখালীর কাথরিয়ার কৃতি সন্তান এসএম আইয়ুব আজ দুপুরে মারা গেছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী কিছু ছাত্রনামধারী এই বরণ্যে শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এরপর থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।

মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম নামে একজন লেখেন, কলেজ জীবনে শিক্ষক হিসেবে সবচেয়ে প্রিয় একজন। আইয়ুব স্যার আর নেই। আমি এখনো চোখ বন্ধ করলেই কেমিস্ট্রি ১ম পত্রের সব টপিক চোখে ভাসে। যেকোনো সময় ইন্টারের কেমিস্ট্রি পরীক্ষা, যেকোনো প্রশ্ন দিলেই আমি মিনিমাম ৮০ পাবোই। আইয়ুব স্যার শিক্ষক হিসেবে এতো অসাধারণ ছিলেন, চোখ বন্ধ করে কেমিস্ট্রি কোনো টপিক আসলেই শিক্ষক আইয়ুব স্যার কিভাবে পড়াচ্ছেন চোখে ভেসে আসছে। সরল অন্তর, বলিষ্ঠ আচরণের আইয়ুব স্যার’।

কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ন্যাক্করজনক ঘটনা ঘটেছিল ২৪ সেপ্টেম্বর। সেদিন বৈষম্যবিরাধী ছাত্র নাম দিয়ে বহিরাগতরা চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকার হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আইয়ুবকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। একইভাবে অধ্যক্ষকে মারধর করে কলেজের আরও ৩ শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়।

সেদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বৈষম্যবিরোধী উল্লেখ করে একটি দল চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। সেসময় সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহিরাগত ছাত্রদের হত্যার হুমকিতে এক পর্যায়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।

কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, সেদিন শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছিল বহিরাগতরা। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ব্যক্তিগত অর্থায়নে গড়ে তুলেছিলন। প্রায় ৩৪ বছরের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা প্রসারে চট্টগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিশাল এ ডিগ্রি কলেজটির শুধুমাত্র একাডেমিক ভবনটি সরকারি অর্থায়নে গড়া। বাকিসব সাবেক ওই মন্ত্রীর ব্যক্তিগত অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছিল। মূলত প্রতিষ্ঠানটিকে অচল এবং একটি পক্ষ কলেজটিকে দখল করার জন্য এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বলে জানিয়েছে তারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027070045471191