দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল ও পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে অভিভাবক মুসফিকা ইসলাম বলেছেন, আমাদের বাচ্চা শিক্ষকের বাসায় ব্যাচে যায় না তাই সে ত্রিভুজ পায় না। শিক্ষকরা মুখ দেখে দেখে মূল্যায়ন করেন। এ মূল্যায়ন পদ্ধতি আমরা চাই না।
রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নেয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মূল্যায়নে বৈষম্যের এ অভিযোগ তোলেন তিনি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এ অভিযোগ তোলেন মুসফিকা ইসলাম। নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল ও পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি জানান, তার সন্তান মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।
আরো পড়ুন :
নতুন শিক্ষাক্রমে অন্যান্য বিষয়ের মতো ধর্ম শিক্ষাও মূল্যায়ন হবে : শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে মুখস্থবিদ্যা থেকে বের হতে পারবো : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
তিনি আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে যৌন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের পিরিয়ড সম্পর্কে বাচ্চাদের জানার দরকার কি? যতোটুকু জানার তা বাচ্চা এমনি এমনি জানবে। এর পরের অধ্যায় হচ্ছে এসো বন্ধু হই। সবাইকে বন্ধু হতে হবে কেনো?
তিনি বলেন, আমার বাচ্চা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যা পড়ে এসেছিলো সেগুলোও ভুলে গেছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা যদি বাংলা-ইংরেজিতে ভালো হতে চাই গ্রামার জানতে হবে। সেগুলো নাই। পদ্য গদ্য এগুলো নাই। বাংলা বইতে ছক ছক করা। এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কি শিখবে।
তিনি বলেন, গণিত বইতে প্রথমে প্রতীক ও দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে জ্যামিতি। কোনো সূত্র নাই। আমি যদি সূত্রই না জানি আমি কিভাবে অংক করবো? নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
মুসফিকা ইসলাম আরো বলেন, ছোটবেলা থেকে যে চর্চার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে ইন্টার লাইফে গেলে এ বাচ্চাগুলো কি করবে? বাচ্চাগুলোর জীবন নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।
সাভারের মর্নিং গ্লোরি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক পরিচয় দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের সমালোচনা করেন একজন। যদিও নতুন শিক্ষাক্রম পঞ্চম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ডা. আফরোজ নাসরিন নামের ওই অভিভাবক (যার সন্তান ৫ম শ্রেণিতে পড়ে) বলেন, অপরের দুখে দুঃখী হয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। মুখস্ত বিদ্যা অনেক ভালো, আমি নিজে খুব পারদর্শী। তিনি বলেন, আমার ছেলে থার্ড বেঞ্চে বসলেও তার খাতা শিক্ষক দেখতে পারেন না। তিনি সব শিক্ষার্থীকে নতুন শিক্ষাক্রম কিভাবে পড়াবেন। আমরা শিশুদের ফাঁকিবাজি শেখাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, দলগত কাজ করে মানুষ কি শিখবে? দলের যে গ্রুপ লিডার সে কাজ করে আর বাকিরা বসে থাকে। শিক্ষকরা বাচ্চাদের বলেন, অধিদপ্তর থেকে কেউ আসলে বলবা নতুন শিক্ষাক্রম আমার পছন্দ হয়েছে। আমার তো শিক্ষকের প্রতি অশ্রদ্ধা চলে আসতেছে।
পরবর্তীতে প্রশ্ন করা হলে ডা. আফরোজ নাসরিন জানান তারা সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোনো সমালোচনা হচ্ছে, প্রশ্ন করে আফরোজাও দাবি করেন, তার বাচ্চা আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবেন। তাই তিনি শঙ্কিত।
আলী আশরাফ আখন্দ নামের এক ব্যক্তি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দাবি করেছেন তিনিই এই অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। আশরাফ আখন্দ দাবি করেন তার অফিস ৪২/ছ পুরানা পল্টন লাইনে (৪র্থ তলা)।
লেখক ও অভিভাবক পরিচয় দেয়া রাখাল রাহা নামের এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান। তিনি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বলেন, শিক্ষকদের অধিকাংশই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল দাবি আদায়ে তারা আগামী ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অভিভাবক সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এর আগে এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে প্রতিদিন নিজ নিজ সন্তানের স্কুলের সামনে সমাবেশ ও ১৪ নভেম্বর ডিসিদের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলেও ঘোষণা করেছেন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বারবার বলে আসছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হবে না। তাই কোচিং মালিকরা তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধীতা করছেন। এছাড়া কিছু অভিভাবক ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন মর্মেও অভিযোগ করে আসছেন মন্ত্রী। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।