‘বরেণ্য শিক্ষাবিদদের উপাচার্য হতে বাধা কোথায়’

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী |

গত ২৯ মার্চ জাতীয় সংসদের দুজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘বরেণ্য অনেক শিক্ষাবিদই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী হন না। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু সমালোচনা আছে। যেগুলোর সত্যতা আছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।

জাতীয় সংসদে দেশের শিক্ষামন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের গুরুত্ব মোটেও উপেক্ষা করা যাবে না। অন্তত তিন-চার দশক ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ এবং কোনো কোনো উপাচার্যের বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে উপাচার্য পদের মর্যাদা কতটা হানি হয়েছে, সেটি বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগ দেখে এ কথা বলা যাবে না যে প্রকাশিত সব তথ্যই সত্য ছিল। শুক্রবার (১ এপ্রিল) কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে এ আরও জানা যায়, দীর্ঘদিন একজন শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অনেক কিছুই কাছ থেকে দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, উপাচার্য পদটি নানা কারণেই কারো কারো কাছে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় হলেও কেউ কেউ ওই পদে নিজেদের মোটেও খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য যোগ্য মনে করেন না। পদটি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৬। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫৩। এগুলোর বেশির ভাগই খুব সাম্প্রতিকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা হচ্ছে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিজ্ঞ, প্রবীণ শিক্ষক ও অধ্যাপকদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোকে মানসম্মতভাবে গড়ে তোলার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আনা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই।

সিনিয়র শিক্ষক ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রবীণ, নবীনের সমন্বয়েই কেবল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ও বিভাগগুলো মানসম্মতভাবে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধি-বিধান ও নিয়ম রাখা হয়নি। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এক-দুই দশকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। উপাচার্য পদে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাউকে এনে বসালেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলবেন—এমনটি আশা করা যায় না। গত তিন দশকে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম থেকে অনেকটাই বিচ্যুত হয়েছে। এগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ও স্বার্থোদ্ধারের প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের প্রভাব নিরঙ্কুশ হয়েছে। মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের লোকবল অপরিহার্য তার সিকি ভাগও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থেকেছে, তাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রাপ্তিকে সবচেয়ে উত্তম জায়গা মনে করে প্রভাবশালীদের দিয়ে তা আদায় করে নিয়েছেন। এর ব্যত্যয় ঘটানো কোনো উপাচার্যের পক্ষে সম্ভব নয়। সেখানে কোনো প্রকৃত নীতিবান, আদর্শবান শিক্ষাবিদের পক্ষে ওই পদে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ভেতরের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের মন জুগিয়ে চলা মোটের ওপর অসম্ভব ব্যাপার।

যোগ্য, নীতিমান ও আদর্শবান ব্যক্তিদের পক্ষে আপস করা সম্ভব নয়। ওই পদের জন্য যোগ্য হিসেবে তাঁরাই বিবেচিত হন, যাঁরা আপস করতে জানেন। স্থানীয় নেতাদের, এমনকি ছাত্রসংগঠনের নেতাদেরও শলাপরামর্শ নিতে জানেন। যাঁরা তা করতে চান না, তাঁদের পক্ষে এই দায়িত্বে থাকা মোটের ওপর অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নানা প্রতিক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে সৃষ্টি হওয়ার মতো ঘটনা নিকট অতীতে কম ঘটেনি। সে কারণে বাস্তব অবস্থা বুঝে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণ ও যোগ্য অনেক অধ্যাপকই নিয়োগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন। অবশ্য আজকাল অধ্যাপকদের মধ্যে সেই সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে খুব বেশি আমন্ত্রণ পেয়েছেন, এমনটিও নয়। উপাচার্য নিয়োগের আগে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেসব নাম উপাচার্য পদে পেয়ে থাকে, সেগুলোর প্রায় সব কটি কারো না কারো মাধ্যমে পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও চলে নানাজনের তদবির। যোগ্যতার মানদণ্ড দাঁড়ায় গিয়ে আনুগত্যে। কিন্তু সেই আনুগত্য কতটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে, সেটি এক জটিল অভিজ্ঞতা।

অনেকেই উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন কারো কারো মাধ্যমে। কিন্তু নিয়োগের আগে তলিয়ে দেখা হয়নি এই অধ্যাপকের রাজনৈতিক অতীত কিংবা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঝুলি কতটা সমৃদ্ধ ছিল। পদে বসার পর অনেকের মুখেই সরকারপ্রধানের প্রশংসা ও বন্দনা শোনা গেলেও ভেতরে তিনি মোটেও সেই আদর্শের মানুষ নন। এমন উপাচার্যদের হাতে পড়ে নতুন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক যুগের জন্য পিছিয়ে গেছে। তাঁদের নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ কৌশল বোঝা মোটেও কঠিন কিছু নয়। যাঁরা নিয়োগ পাওয়ার জন্য তদবির করেন, তাঁদের চেনা মোটেও সহজ নয়। বড় বড় জায়গা থেকে ফোন, ডিও লেটার আসে, যা উপেক্ষা করা সহজ নয়। কিন্তু নিয়োগ পাওয়ার পর বুঝতে কারো বাকি থাকেনি এ পণ্যের যাচাই-বাছাই হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় এমন নিম্নমানের পণ্যে অনেকটাই ভরে গেছে। সেই কৃতিত্বের দায় কিছুটা উপাচার্যের, বাকিটা অন্যদের। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগ পেতে যা করেছেন, তার সামান্যই হয়তো পত্রপত্রিকায় স্থান পেয়েছে। অনেকের সঙ্গে উপাচার্যদের সম্পর্কের কথা মোটেও গোপনীয় বিষয় নয়। এটি এখন ওপেন সিক্রেট।

আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের শাসনামলে যেসব উপাচার্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বা করছেন, তাঁদের সবার আমলনামা খুব নিবিড়ভাবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে মনে হয় না আওয়ামী লীগের খুব বেশি খুশি হওয়ার সংবাদ থাকবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এমন সব প্রার্থীর জন্য তদবির করেছেন, যাঁদের অতীত তাঁরা কতটা জেনে করেছেন, না অন্য কোনো কারণে করেছেন কি না, তা আমার জানা নেই। উপাচার্যদেরও কেউ কেউ সরকারের এই দুর্বলতাটিকে নিজের ইচ্ছামতো অপব্যবহার করেছেন। ফলে শেষ বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর শিক্ষার্থীরা। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগের মান হ্রাস পেতে পেতে এখন তলানিতে ঠেকেছে, অথচ এখন প্রতিযোগিতার বিশ্বে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নীত করা একেবারেই দুরাশার বিষয়।

প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রেও মেধাবী ও যোগ্য প্রশাসকের অভাব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রকট হয়ে উঠেছে। গত তিন-চার দশকে এসব প্রবণতা ক্রমেই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও মনে করে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। নিয়োগপ্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হওয়া উচিত। সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলে বিতর্ক বন্ধ হবে।

এখন জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো অভিজ্ঞ শিক্ষক কোথায়? প্রভাষক নিয়োগ দিয়ে বিভাগ পরিচালনার অভিজ্ঞতা কতটা অবিমৃশ্যকারিতা হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। গবেষণা, উচ্চশিক্ষা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কখনো দাঁড়াতে পারে না। সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় দেওয়া যেতে পারে; কিন্তু উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি অনেক জটিল।

লেখক : মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060689449310303