‘বাস্তবতার সঙ্গে সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার মিল কম’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

 

ছাপানো সংবাদপত্রগুলো তাদের নথিপত্রে প্রচার সংখ্যার যে খতিয়ান দেয়, তার সঙ্গে ‘বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলছেন, সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তদন্ত ছাড়াও সরকারি অন্যান্য সংস্থাকে নিয়ে তদন্ত করানো হবে।

সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সম্পাদক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এ বিষয়ে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের পক্ষে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও সংগঠনের উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

নাম সর্বস্ব ও অনিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রদান বন্ধ করে তাদের মিডিয়া তালিকাভূক্তি বাতিল করার দাবি রয়েছে এর মধ্যে।

সম্পাদাক ফোরামের পক্ষ থেকে এই দাবি ওঠায় এখন তা বাস্তবায়ন করা ‘সহজ হবে’ বলে মত দেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দেশে অনেক পত্রিকা আছে নিয়মিত বের হয় না। যেদিন ক্রোড়পত্র বা বিজ্ঞাপন পায়, সেদিন বের হয়। অথচ এগুলো ‘দৈনিক’ পত্রিকা হিসেবে নিবন্ধিত।

“এই পত্রিকাগুলোর উপস্থিতির ফলে যে পত্রিকাগুলো নিয়মিত বের হয় তাদের স্বার্থের হানী হয়। এবং অনিয়মিত বের হওয়া পত্রিকাতো দৈনিক পত্রিকা হতে পারে না। এটি নিয়ে আমি উদ্যোগ নিয়েছি, এজন্য অনেকেই আমার ওপর অসস্তুষ্ট।

“দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হত, আমি অনেকটা সেটি কমাতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে এটিকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা নিয়ে, যে প্রচার সংখ্যা আছে, যেভাবে লিপিবদ্ধ আছে, এটার সাথে বাস্তবতার আসলে মিল খুব কম। … ডিএফপির তদন্তের বাইরেও সরকারি তদন্ত সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানোর কাজ হাতে নিয়েছি। ডিএফপির তালিকাভুক্ত প্রথম ১০০টি পত্রিকা প্রথম তদন্ত করা হবে, এরপর বাকি ১০০ করে, এভাবে তদন্ত করা হবে। এরপর বোঝা যাবে আসলে প্রচার সংখ্যা কত।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর ছাপনো পত্রিকাগুলোর প্রচার সংখ্যা তলানীতে নেমে যায়, বেশ কয়েকটি পত্রিকা ছাপানো বন্ধও রাখা হয়। এরপরেও অনেক পত্রিকা তাদের প্রচার সংখ্যা বেশি দেখাতে চাচ্ছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “করোনাকালে দুয়েকটি নতুন পত্রিকা বাদে সব পত্রিকার প্রচার সংখ্যা কমেছে। কিন্তু আমার কাছে দরখাস্ত আসে এই করোনাকালেও প্রচার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, যেটি বাস্তবাতার সাথে আসলে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”

সরকারের সমস্ত ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে হাছান বলেন, সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল বিজ্ঞাপন প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে পাওয়া উচিত বলে মত দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমরাও তাগিদপত্র দিয়েছিলাম, আমরা আবারও এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করব।”

সম্পাদক হতে হলে পূর্ণকালীন সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও ন্যূনতম স্নাতক পাসের সনদ থাকার নিয়ম করার দাবি তথ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম। তথ্যমন্ত্রী তাদের দুটি দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেও একটিতে দ্বিমত করেন।

তিনি বলেন, “ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক হতেই হবে, সেটির সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ বাংলাদেশে বহু মানুষ আছে যারা মেট্রিক পাস কিন্তু এমএ পাস বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীর চেয়েও ভালো লেখে এবং তাদের সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা আছে। রবি ঠাকুর তো মেট্রিক পাস করেননি, কাজী নজরুলও করেননি, বিল গেটসকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যলয় থেকে পর পর ফেল করায় বের করে দেওয়া হয়েছিল।

“আমাদের দেশেও এ ধরনের বহু সাংবাদিক আছেন, বহু লেখক আছেন যাদের বড় ডিগ্রি নেই কিংবা স্নাতক ডিগ্রি নেই। এজন্য ডিগ্রি পাস হতেই হবে সেটি বলে এখানে বার দিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।”

সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়েও নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই সেটাও একটি বিবেচ্য বিষয়। কারণ শুধুমাত্র প্রচার সংখ্যা নয়, তারা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করছে কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়।

“ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রেও কিন্তু নানা ধরনের ঘাপলা আছে, সেটা আমি খোলাসা করে বলতে চাই না। সেই ঘাপলা কি আছে এখানে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা জানেন।

“অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে নবম ওয়েজবোর্ড কোনো পত্রিকা বাস্তবায়ন করেনি। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনেকে বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে সঠিকভাবে কতটি পত্রিকা বাস্তবায়ন করেছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে পত্রিকার প্রচার সংখ্যার সাথে সাথে পত্রিকাগুলোকে আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে, বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েজবোর্ড অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়।”

বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন এবং সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদারের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা তথ্যমন্ত্রী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সঙ্গে এই বৈঠকে অংশ নেন।

‘বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম’ গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রচার সংখ্যার দিক দিয়ে মাঝারি যে পত্রিকাগুলো, সেগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সেসব পত্রিকার সম্পাদকদের নিয়ে এই ফোরাম। এখানে উচ্চ প্রচার সংখ্যারও অনেকে আছেন।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058779716491699