আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, বিচারকরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, তাহলে অবশ্যই সংবাদ পরিবেশন করা যাবে, তবে এক্ষেত্রে শতভাগ সত্য তথ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন ও আদালত সাংবাদিকতা (এলআরএফ) ওয়ার্কশপ-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ল রিপোর্টার্স ফোরাম। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, বিচারঙ্গন, আইনাঙ্গন, বিচারক সম্পর্কে যে কোনো নিউজ করতে পারবেন। সেটা যদি পজিটিভ আকারে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, বিচারকের আচার, আচরণ ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সাংবাদিকরা নিউজ করতে পারবেন না, এটা ঠিক না। পারবেন, কিন্তু সেই তথ্য শতভাগ সত্য হতে হবে।
এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, বিচারকদের অনেক আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। আচরণবিধি মেনে না চললে সেই বিষয়ে অবশ্যই সংবাদ পরিবেশন করা যাবে, সেই ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আদালত সাংবাদিকতার বিষয়ে এই বিচারপতি বলেন, যতটুকু সত্য, ততটুকু আপনি (সাংবাদিক) করবেন। বিচারক যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, কোনো বিচারকের যদি ঢাকা শহরে ৮/১০টি ফ্ল্যাট থাকে, জমি থাকে বা রাতারাতি জমির মালিক হয়ে যান-সে বিষয়ে নিউজ করতে পারবেন। যতটুকু সত্য, ততটুকুই লিখবেন। তিনি বলেন, ধরেন কোনো বিচারকের চারটি ফ্ল্যাট আছে। আপনি লিখে দিলেন চারটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কিছু কিছু সূত্র জানিয়েছে, তার আরও ৩ থেকে ৪টি ফ্ল্যাট আছে। ততটুকু দেবেন যতটুকু আপনি প্রমাণ করতে পারবেন। যদি আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়, অবশ্যই ডিপেন্ড করবেন। আমি মনে করি, এ ধরনের সাহসী সাংবাদিকতা অবশ্যই থাকা দরকার। কারণ, আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। বিচারক হই, যেই হই। আমাদের জবাবদিহি আছে জনগণের কাছে, আইনের কাছে, সংবিধানের কাছে। তবে সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে, যাতে বিচারকের মানহানি না হয়।কিশোর গ্যাংকে একটি সামাজিক সমস্যা বলে উল্লেখ করেন ‘সুপ্রিমকোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস’-এর সভাপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, শিশু আইন ও হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে, শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পরিচয় যাতে প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু আমি কয়েকদিন ধরে দেখছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে প্রবণতা আছে কে কতটুকু কাজ করছে তা তুলে ধরার। তারা হয়তো ডাকল, ডেকে ব্রিফ করল। প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হবে এরা কিশোর। কারও যদি বয়স কমবেশি হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন এলে সেটা আদালত নির্ধারণ করবে।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের গ্রেফতার হওয়া বা ধরা আইনগত বাধা নেই। এটা করতেই পারে। কিন্তু এদের ছবি দেওয়া মিডিয়ায়, পত্রিকায় সেভাবে পরিচয় প্রকাশ করা, এটা কিন্তু আইনে নিষেধ করছে। এখন আপনাকে (সাংবাদিক) ডেকে ব্রিফ করল। করলেই কি আপনি ছবিসহ নাম প্রকাশ করে দেবেন? সেক্ষেত্রে আপনি সংযত হয়ে আইনটা মেনে সংবাদ পরিবেশন করবেন।
ফোরামের সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।