‘বিনাধান-২৫’ ঘিরে মাঠে মাঠে জেগেছে নতুন আশার স্বপ্ন। সাফল্যের কারিগর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিজ্ঞানী ড. সাকিনা খানম। যার শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যপীড়িত জনপদ গাইবান্ধায় মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে। ছেলেবেলা থেকেই দৃঢ়সংকল্প ছিল বড় হয়ে এই জনপদ তথা সারাদেশের জন্য একটা কিছু করার। সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিই আজ তাকে এনে দিয়েছে সাফল্য। তার হাত ধরেই এসেছে বোরো মৌসুমে দেশের সবচেয়ে সেরা জাত ‘বিনাধান-২৫’। যে জাতটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাখতে পারবে বড় ভূমিকা। এমনটাই এই কৃষিবিজ্ঞানীর প্রত্যাশা। যদিও ধানটি মাঠে নিতে তাকে মাড়াতে হয়েছে বন্ধুর পথ। কর্মক্ষেত্রেও ছিল নানা বঞ্চনা। তবু সব বাধা ঠেলে এগিয়েছেন, পেয়েছেন জয়ও।
সাকিনা খানম বলেন, নিজেকে কখনই ‘নারী বিজ্ঞানী’ মনে করি না, আমি শুধুই বিজ্ঞানী। ১০ বছর আগে জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা এ ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাদের অনেকেই এখন অবসরে। এর মধ্যে ধানটি ছাড় পাওয়ার জন্যও আবেদন জমা পড়ে। কিছু সমস্যা থাকায় ছাড় পায়নি। পরে ধানটি নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ‘বিনাধান-২৫’ জাত অবমুক্ত করা হয়। এ বছরই বোরো মৌসুমে প্রথম সারাদেশে চাষ হয় ধানটি।
ড. সাকিনা খানম ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গাইবান্ধা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজে। এরপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্স এবং প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পরে জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আণবিক জেনেটিক্স এবং ফিজিওলজিতে পিএইচডি করেন। তিনি আবুধাবিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় খেজুরের বৈশিষ্ট্য এবং জেনেটিক বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করেন। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাকর্মে ধানের কৃষিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সাইটোপ্লাজমিক প্রভাব নিয়েও তার কাজ রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যোগ দেন বিনায়।